পাকতে শুরু করেছে আমন ধান। কার্তিকের হিমেল হাওয়ায় দোল খাচ্ছে ধানের সোনালী শীষ। সেই সঙ্গে দোল খাচ্ছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে অগ্রহায়ণের প্রথম দিকে কৃষক ঘরে তুলবেন সোনালী ফসল। ভরে যাবে গোলা, মুখে ফুটবে নবান্নের হাসি। কিন্তু সেই হাসি মলিন হয়ে যেতে বসেছে কারেন্ট পোকার আক্রমণে।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে যশোর সদর উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আমন চাষের জন্য উপযোগী। তাছাড়া এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমন চাষ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে। চলতি মৌসুমে যশোর জেলার ৮ উপজেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো এক লক্ষ ৩৪ হাজার ৯৭৫ হেক্টর। যা অর্জিত হয়েছে এক লক্ষ ৩৯ হাজার ১২৫ হেক্টর। যশোর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আমন ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে । কিন্তু সদর উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।
যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ছাতিয়ানতলা গ্রামের চাষী কবির সদ্দার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, চলতি আমন মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। এর মধ্যে প্রায় দেড় বিঘা জমিতে কারেন্ট পোকা ধরেছে। গতকাল কীটনাশক দিয়েছি। এখন কী হবে জানি না।
একই এলাকার চাষী আলতাফ শেখ জানান, রোপা আমনের ক্ষেতে কারেন্ট পোকায় আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত ধানক্ষেত দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছে পেকে গেছে। ধানের শীষ ও গাছ সম্পূর্ণ সোনালী বর্ণ ধারণ করেছে। কিন্তু আক্রান্ত গাছের ধানের ভেতরে কোনো দানা নেই। এ নিয়ে এখন বিপাকে আছি।
আরবপুর এলাকার চাষী জামশেদ, তোতা ও খালেক অভিযোগ করে বলেন, কারেন্ট পোকা এক ধরনের ছোঁয়াচে পোকা। এক জমিতে লাগলে অন্য জমিতেও আক্রমণ করে। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বা তাদের কোন কৃষি কর্মকর্তা মাঠে কৃষকদের এ রোগ থেকে মুক্তির জন্য কোন প্রকার তথ্য বা চিকিৎসা দিচ্ছে না।
সদর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, সদর উপজেলায় কারেন্ট পোকার আক্রমণ এখন সহনীয় পর্যায়ে আছে। বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তারা সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। কারেন্ট পোকার হাত থেকে রেহাই পেতে আলোর ফাঁদ এবং পোকা নির্ণয় করে ওষুধ ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, অন্ধকারাচ্ছন্ন ও আলো-বাতাস কম থাকে এমন জমিতে এই পোকার আক্রমণ হয়। প্রাথমিক অবস্থায় কীটনাশক ছিটিয়ে এটি দমন করা যায়। অন্যবারের তুলনায় এ জেলায় কারেন্ট পোকার আক্রমণ কম। যেসব ক্ষেতে ধান পাকা শুরু হয়েছে সেগুলো কৃষকদের কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।