বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব আমির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি নিজ নামে তার এলাকার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নামকরণ করেছেন।
বিদ্যালয়টির নাম আমতৈল মাধ্যমিক বিদ্যালয়। মেহেরপুর গাংনী উপজেলার এই বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্যদের সভাপতি ছিলেন তিনি। এখন প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেকে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচয় দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
জানা গেছে, বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন তিনতলা ভবনে ‘আমির উদ্দিন আহমেদ একাডেমিক ভবন’ লেখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার নাম ভবনে লেখার রেওয়াজ রয়েছে। তবে প্রশ্ন- আমির হোসেন তো বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নন। বিগত কমিটিগুলোতে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তার নামই নেই। আর পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব তো তার আগে কয়েকজন পালন করেছেন। কিন্তু তার নামে হঠাৎ ভবনের নামকরণ কেন করা হলো?
নিয়ম অনুযায়ী, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হতে হলে তহবিলে ১০ লাখ টাকা দান করতে হয়। কিন্তু আমির উদ্দিন কোনও অর্থই দান করেননি। তাহলে কিসের ভিত্তিতে তার নামে ভবনের নামকরণ করা হচ্ছে?
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘সাবেক সভাপতি আমির উদ্দিনের নির্দেশেই তার নামে ভবনের নামকরণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি আমাদের কোনও মতামত নেননি।’
অভিযোগ আছে, তিনি অতিরিক্ত সচিব থাকায় প্রশাসনে তার একটা প্রভাব আছে। তাই ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি দীর্ঘ আট বছর বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন। সেক্ষেত্রে কমিটি অনুমোদন করাও তার জন্য সহজ ছিল। তবে কেউ তার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে পারেননি। ফলে তিনি নানাবিধ অনিয়ম করে পার পেয়েছেন।
আরও অভিযোগ আছে, বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি থাকাকালে তার পুত্রবধূ নাসরিন আক্তার ডলিকে বিদ্যালয়ের শাখায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। যদিও পদটি এমপিওভুক্ত হয়নি। তবে আমির উদ্দিন ওই শিক্ষকের সম্মানি বাবদ প্রতিমাসে ছয় হাজার টাকা করে নিয়েছেন। অথচ নাছরিন আক্তার ডলি কখনও বিদ্যালয়ে যাননি। শুধু তার নাম ব্যবহার করে বিদ্যালয় তহবিল থেকে টাকা নিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে আমতৈল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নাছরিন আক্তার ডলি নামের কোনও শিক্ষককে দেখিনি। কিন্তু তার নামে সাবেক সভাপতি আমির উদ্দিন প্রতিমাসে টাকা নিতেন। পরে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে ওই টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তিনি প্রশাসনের ক্ষমতার অপব্যবহার করে সভাপতির পদে বহাল থাকতে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে উচ্চ কার্যালয় থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করিয়েছেন। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ওই চিঠিতে তিনি প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিজেকে দাবি করছেন, যা মনগড়া ও তার কল্পনাপ্রসূত। কিন্তু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকাল থেকে অদ্যবধি কোনও কমিটিতে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তার নাম নেই।’
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের লোক হওয়ায় আমির উদ্দিনের কাছে এলাকার মানুষের উন্নয়ন প্রত্যাশা ছিলও অনেক। কিন্তু তিনি উন্নয়নের বদলে এলাকার মানুষকে নানাভাবে আশাহত করেছেন। হাসপাতাল নির্মাণের কথা বলে কৌশলে তিনি আমতৈল পালপাড়ার মৃত আছের উদ্দিনের ছেলে আযম আলী মোল্লার কাছ থেকে দেড় বিঘা জমি নিজ নামে রেজিস্ট্রি করে নেন। আর রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রেও তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি নিজ বাড়ির সামনে দিয়ে নিয়ে গেছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোকাদ্দেস আলী বলেন, ‘বর্তমান পরিচালনা পর্যদ বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু সাবেক সভাপতির অসহযোগিতায় এলাকার মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন, যা বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের জন্য খারাপ।’
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আমির উদ্দিনের ফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।