আলোর পথে ফিরছে দেড় শতাধিক জলদস্যু

কক্সবাজার, দেশের খবর

শাহরিয়ার হাসান ও মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-20 09:35:46

কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী। এক দিকে পাহাড় অন্যদিকে সমুদ্র। জলদস্যু ও অস্ত্র কারিগরদের আস্তানা হিসেবে পরিচিত এ উপজেলা। প্রথমবারের পর দ্বিতীয়বারের মত আত্মসমর্পণের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে শীর্ষ সাত বাহিনী’র অন্তত দেড় শতাধিক জলদস্যু। ইতিমধ্যে শতাধিক জলদস্যুকে সেফহোমে নিয়ে আসা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২০ অক্টোবর মহেশখালী-কুতুবদিয়ার ৪৩ জলদস্যু আত্মসমর্পণের পরও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় অনেক শীর্ষ জলদস্যু। এ কারণে পাহাড় ও সাগর উপকূলে অভিযান বৃদ্ধি করে পুলিশ। অভিযানের মুখে আবারো আত্মসমর্পণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া ও পেকুয়ার অন্তত দেড় শতাধিক জলদস্যু ও অস্ত্র কারিগর। এসব উপজেলায় দাপিয়ে বেড়ানো সাত বাহিনীর সরদারসহ সদস্যরা আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানা গেছে। তবে, ঠিক কবে নাগাদ এ আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতা হবে সে সম্পর্কে কিছুই জানাতে পারেনি সূত্রটি।

স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে, গত ৮ (নভেম্বর) মহেশখালী উপজেলার শীর্ষ জলদস্যু ও অস্ত্র কারিগর আয়ুব আলী নিজের বাহিনীর ২০ সদস্যসহ আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্যে সেফহোমে চলে গেছেন। আলোচিত এসআই পরেশ কারবারি হত্যাকাণ্ডের মূল আসামীসহ হত্যা, গুম, অপহরণসহ অন্তত দেড় ডজন মামলার আসামি ছিল আয়ুব। দুই বস্তা অস্ত্র নিয়ে সেফহোমে গেছে এই শীর্ষ জলদস্যু।

এছাড়াও অন্তত শতাধিক জলদস্যুকে সেফহোমে নেয়া হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ছিল। তাদের কারণে যুগ যুগ ধরে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার আশপাশের এলাকা অশান্ত ছিল। যাদের মধ্যে রয়েছে, মহেশখালীর কালারমারছড়ার আলোচিত জিয়া বাহিনীর প্রধান জিয়াউর রহমান জিয়া, তার বাহিনীর সদস্য মানিক, আয়াতুল্লাহ, আব্দুস শুক্কুর, সিরিপ মিয়া, একরাম ও বশিরসহ অন্তত ১৫জন।

চেয়ারম্যান তারেক শরীফের অনুসারী হিসেবে পরিচিত কালা জাহাঙ্গীর বাহিনীর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম, সদস্য আবুলু, সোনা মিয়া, জমির উদ্দীনসহ প্রায় ১৫জন, নুনাছড়ির মাহমুদুল্লাহ বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ আলী, সেকেন্ড ইন কমান্ড বদাইয়াসহ ১৫জন, ঝাপুয়ার সিরাজ বাহিনীর প্রধান সিরাজউদ্দৌল্লাহ, নলবিলার মুজিব বাহিনীর প্রধান মজিবুর রহমান প্রকাশ শেখ মুজিব এবং কুতুবদিয়ার লেমশীখালীর কালু বাহিনীর প্রধান মো. কালু প্রকাশ গুরা কালুসহ তার বাহিনীর ১৫ থেকে ২০জন।

বরাবরের মত এবারো এ আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার মধ্যস্থতাকারী একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলের বিশেষ প্রতিনিধি আকরাম হোসেন। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, চার উপজেলার অস্ত্রের কারিগর ও শীর্ষ জলদস্যুদের টার্গেট করে এবারের আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত। আগের বার জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যারা আত্মসমর্পণের বাইরে ছিল তারাও আসার সুযোগ রয়েছে। দুই শতাধিক অস্ত্রের কারিগর, সন্ত্রাসী ও জলদস্যুর সাথে যোগাযোগ হয়েছে। তাদের মধ্যে দেড়-শতাধিক আত্মসমর্পণের আওতায় আসতে পারে। তবে, এটি কবে নাগাদ হবে তা বলতে পারেননি তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, অস্ত্রের কারিগর বা জলদস্যু অনেকে নিরাপদ জীবনে ফেরার আগ্রহের কথা জানিয়েছে। বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে ‘আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান’ হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের পরে আমাদের কাছে জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দেড় শতাধিক আত্মসমর্পণকারী হতে পারে। চলতি মাসে না হয় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে।

এর আগে ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদসহ ৪৩ জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে। এরপর চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ইয়াবা ও অস্ত্রসহ টেকনাফে আত্মসমর্পণ করে ১০২জন ইয়াবা কারবারি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর