বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন মুচি বাবুলাল। তবু জীবিকার তাগিদে জুতা সেলাই করেন। জুতা সেলাইয়ে নিজের ভাগ্যবদল না হলেও মেয়েকে ভালো ঘরে বিয়ে দিতে চান। তাই একটু একটু করে টাকা জমিয়েছেন। তবে বিয়ের খরচের তুলনায় জমানো টাকার পরিমাণ খুবই কম।
বাবুলালের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। তার ৮ সন্তানের মধ্যে তিন ছেলে ও দুই মেয়ে বিয়ে করে আলাদা হয়েছেন। তারা বাবুলালের খোঁজ নেন না। এখন স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে অভাব-অনটনের সংসার তার।
বাংলা অগ্রহায়ণ মাসের ১৪ তারিখ বাবুলালের ছোট মেয়ে শ্রীমা রবিদাসের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে। পাত্র পেশায় নরসুন্দর। বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া এলাকায়। তবে অর্থ সংকটে এখনো বিয়ের সকল প্রস্ততি শেষ করতে পারেননি।
পৌর শহরের পাটবাজারস্থ হারুন টি-স্টলের সামনে ফুটপাতে মুচির কাজ করেন বাবুলাল। রোববার (১০ নভেম্বর) বিকেলে সেখানে বসেই এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তার। তিনি বলেন, ‘বিয়ে মানেই অনেক খরচ। কিন্তু আমার খরচ করার সামর্থ্য নেই। তবে পাত্রপক্ষের সম্মানে যতটুকু খরচ না করলেই নয় ততটুকু তো করতেই হবে।’
বিয়েতে অতিথি আপ্যায়ন, ডেকোরেশন, মেয়ের সাজসজ্জা, অলংকার, পাত্রের উপঢৌকন সহ সব কিছু মিলিয়ে প্রায় দেড়লাখ টাকা প্রয়োজন বাবুলালের। টাকা যোগাতে ধারদেনার পাশাপাশি নিজের একটি গরু ও ছাগল বিক্রি করে প্রায় ৬০ হাজার টাকা জোগাড় করেছেন বাবুলাল। তবে বাকি টাকা জোগাড় করতে এখন তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই বিয়ের খরচ জোগাতে ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মুচির কাজ করেন বাবুলাল।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে গত শনিবার দিনভর বৃষ্টিতে রোজগার ভালো হয়নি বাবুলালের। তাই রোববার খুব সকালে ফুটপাতে বসেছেন। দুপুর পর্যন্ত দেড়শ টাকা আয় হয়। কিন্তু বিকেলে বৃষ্টি নামলে বাড়িতে রওনা হন তিনি।
গৌরীপুর-বেকুরহাটি সড়কঘেঁষা বালুয়া নদীর পাশে জরাজীর্ণ বাড়িতে বাবুলালের বসবাস। সন্ধ্যার দিকে ওই বাড়িতে পা রাখতেই টের পাওয়া গেলো উৎসবের আমেজ। কোথায় বিয়ের গেট হবে, কোথায় বর বসবে, বিয়ের লগ্ন কখন হবে এসব বিষয় নিয়ে পরামর্শ করছেন বাবুলালের পরিবারের সদস্যরা। এমন সময় বাবুলালের আগমনে বারান্দায় জলচৌকি পেতে দেন স্ত্রী রেণু রবিদাস। স্বামীর কাছে জানতে চান টাকা জোগাড়ের অগ্রগতি কতদূর।
বাবুলাল বলেন, ‘সেই চিন্তাই তো করছি। বিয়ের খাওয়া-দাওয়া যাই হোক। পাত্রকে তো ভালো উপঢৌকন দিতে হবে। নয়তো শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে মেয়েকে অনেক কথা শোনতে হবে।’