ঘূর্ণিঝড় বুলবুল'র আঘাতে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ভোলার ১২০টি ইট ভাটায় প্রায় শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। টানা বর্ষণ ও ঝড়ে ইট ভাটায় পোড়ানোর জন্য রাখা কাচা ইট এখন মাটির স্তূপে পরিণত হয়েছে। কয়দিন আগেও ইট ভাটাগুলোতে সারি সারি কাচা ইট সাজানো ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সকল ইট ভিজে মাটির স্তূপে পরিণত হয়েছে। এতে করে ইট পোড়ানোর আগেই ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে ইট ব্যবসায়ীদের। ফলে এ ইট ভাটাগুলোর নতুন ইট উৎপাদন দু’মাস পিছিয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে এ ক্ষতির প্রভাব পড়বে ইটের দামের উপর।
জানা যায়, ভোলার সাতটি উপজেলায় ১২০টি ইট ভাটা রয়েছে। সকল ইট ভাটায় চলছিলো নতুন ইট তৈরির কাজ। এগুলো চলতি মাসের শেষের দিকে পোড়ানো শুরু করার কথা ছিলো। মৌসুমের শুরুতেই ঘূর্ণিঝড় হওয়ায় পোড়ানোর জন্য প্রস্তুত রাখা সকল কাঁচা ইট বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) ভোলার বিভিন্ন ইটভাটা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি সাজিয়ে রাখা কাঁচা ইটগুলো বৃষ্টির পানিতে কাদায় পরিণত হয়েছে। কিছু ইট পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করা হলেও শেষ পর্যন্ত বুলবুল’র প্রভাব থেকে শেষ রক্ষা হয়নি।
মায়ের দোয়া ও সাবাব ব্রিকস এর মালিক আমির হোসেন জানান, ঝড়ে তার দুইটি ফিল্ডের ১৩ লাখ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে এবং ইট পোড়ানোর জন্য মজুদ কয়লা জোয়ারের পানিতে নদীতে চলে গেছে। এতে আমার দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ইলিশা ব্রিকস'র মালিক মাকসুদুর রহমান জানান, ঝড়ের আঘাতে তার ফিল্ডের প্রায় ১০ লাখ কাচা ইট পাটিতে পরিণত হয়েছে। এতে তার অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে তার দুই বছর ইট পোড়ানো লাগবে।
ভোলা সদর উপজেলার রূপালী ব্রিকস ও সুরামা ব্রিকস'র মালিক মো. নুরুল ইসলাম মিয়া বলেন, তার দুইটি ইট ভাটায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা। তার দুইটি ইট ভাটায় ১৩ থেকে ১৪ লাখ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে।
জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একতা ও ফ্রেন্ডস ব্রিকস'র মালিক তরিকুল ইসলাম কায়েদ জানান, ঘূণিঝড়ে ভোলার প্রায় ১২৫টি ইট ভাটার সবগুলোই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। যার আর্থিক পরিমাণ শত কোটি টাকা। এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য চলতি অর্থ বছরে ইটভাটা মালিকদের আয়কর মওকুফের দাবি করেন। এছাড়া সরকার যদি এ সকল ইট ভাটার মালিকদের আর্থিক সহায়তা, সহজ শর্তে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ দেয়া ও পূর্বের ঋণের সুদ মওকুফ না করে তাহলে তারা পথে বসে যাবে।
ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ইট ভাটার মালিকরা যদি তাদের ক্ষতি দেখিয়ে আমাদের কাছে আবেদন করে তাহলে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তুলে ধরবো। যাতে করে তারা সহজ শর্তে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণসহ আর্থিক সহায়তা পেতে পারে।