নড়াইলের লোহাগড়া রামনারায়ণ পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপিত হয় ১৯০৭ সালে। বর্তমানে লাইব্রেরিতে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র রয়েছে। সরকারি অনুদানও আসে। লাইব্রেরির জমিতে দ্বিতল পাকা ভবনে মার্কেট রয়েছে। মার্কেটে একটি বেসরকারি ব্যাংকসহ ১৬টি দোকান ঘরের ভাড়াও তোলা হয় নিয়মিত। আছে পরিচালনা পর্ষদও। একজন খণ্ডকালীন লাইব্রেরিয়ান বিকেল ৪টা থেকে রাত পর্যন্ত নিয়মিত লাইব্রেরি খোলেন। আছে বই পড়ার জন্য কোলাহলমুক্ত নিরিবিলি পরিবেশ। শুধু নেই বই পড়ার পাঠক। তবে পর্ষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে পাহাড়সম অনিয়মের অভিযোগ আছে।
জানা গেছে, খাতা কলমে সদস্য সংখ্যা প্রায় দু’হাজার। প্রতিষ্ঠাকালীন কোনো সদস্য এখন আর বেঁচে নেই। গত ২০ বছর আগের সদস্যরা এখন নিষ্ক্রিয়। তারা কেউ এখন আর লাইব্রেরিতে আসেন না। নিয়ম অনুযায়ী চাঁদাও দেননা। তালিকা ও ক্যাটালগ না থাকায় বইগুলোর ক্যাটালগভিত্তিক তালিকায় সাজানো নেই। ফলে পছন্দের বই খুঁজতে সময় বেশি লাগায় বই পড়ার আগ্রহ হারিয়েছেন পাঠকরা।
আরও জানা গেছে, পাঠকদের বসার স্থানে গ্রাম্য সালিশ বৈঠক ও বিভিন্ন সভা-সমাবেশ এবং সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া লাইব্রেরি চত্বরে একটি মন্দির রয়েছে। সেখানে এখনো ভক্তরা আসেন। তবে চত্বরটি এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ফলে উপজেলার সবচেয়ে প্রাচীনতম রামনারায়ণ পাবলিক লাইব্রেরি ধুঁকে ধুঁকে চলছে।
লাইব্রেরিতে আব্দুল মালেক বিশ্বাস নামের একজন লাইব্রেরিয়ান ও কাজী গোলাম মোস্তফা মিলন নামে সহকারী লাইব্রেরিয়ান নিযুক্ত আছেন। তবে প্রধান লাইব্রেরিয়ান বার্ধক্যজনিত কারণে আসতে পারেন না, ফলে সহকারী লাইব্রেরিয়ান প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত লাইব্রেরি খোলা রাখেন। তাকে মাসে তিন হাজার ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়া হয়।
তিনি জানান, মাঝে মাঝে পাঠকরা সংবাদপত্র পড়তে আসেন। তবে অধিকাংশ পাঠক তেমন আসেন না।
এলাকার অধিবাসী এবং লাইব্রেরির আজীবন সদস্য সলিমুল্লাহ পাপ্পু, মোল্যা মনিরুজ্জামান ও তাওহিদ শেখ জানান, লাইব্রেরিতে কোনো পাঠক আসেন না। নিয়মিত কোনো সদস্য নেই। কোনো মাসিক মিটিং হয় না। বাৎসরিক সাধারণ সভাসহ (এজিএম) সব কিছুই হয় শুধু খাতা-কলমে। অনিয়ম আর অগণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে প্রাচীন প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ধ্বংসের দ্বারে। তারপরও ঘরে বসে ঘুরে কয়েকজনকে নিয়ে পরিচালনা কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
চলতি বছরের ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্তমান কমিটির মেয়াদ থাকলেও তড়িঘড়ি করে কোনো প্রকার প্রচার প্রচারণা ছাড়াই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।
অধিক সদস্যদের অবহিত করে নির্বাচনের নতুন তফসিল ঘোষণার দাবি ও সম্পাদকের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আকরাম আলী আখিদুল অভিযোগ ও দুর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি ১৯৯৩ সাল থেকে লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমি কোনো অনিয়ম করিনি। লাইব্রেরির পাশে নিজস্ব জমিতে একটি দ্বিতল পাকা ভবন রয়েছে।’
সেখানে একটি বেসরকারি ব্যাংকসহ ১৬টি দোকান ঘর ভাড়া দেওয়া রয়েছে। সেখান থেকে প্রতিমাসে ৬০ হাজার টাকা আসে। এটাই নিয়মিত আয়ের উৎস। এছাড়া সরকারি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুদান পাওয়া যায়।
লাইব্রেরির সভাপতি ও লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুকুল কুমার মৈত্র অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘লাইব্রেরি সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত জানা নেই। নির্বাচনের নতুন তফসিল ঘোষণার বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’