বিরিশিরি থেকে: গারোরা তাদের সংস্কৃতি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন বলে উল্লেখ করেছেন গারো শিক্ষাবিদ ও ইতিহাসবিদ মনীন্দ্রনাথ মারাক।
তিনি বলেছেন, ‘বহুজাতিক ও বিভিন্ন সংস্কৃতির আগ্রাসনে নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষায় হতাশায় ভুগছেন গারোরা। তবে বর্তমানে শিক্ষিত সমাজসহ সবাই সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন হয়েছে। সংস্কৃতি রক্ষায় নিজেদের সন্তানের নাম গারো ভাষায় রাখছেন।’
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে দেশের প্রথম মাল্টিমিডিয়া নিউজপোর্টাল বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-এর আড্ডা-আলোচনা ও মধ্যাহ্নভোজনের অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মনীন্দ্রনাথ মারাক বলেন, ‘সাংসারিক থেকে গারোদের অনেকে খ্রিস্টান ধর্মগ্রহণ করেছেন। ফলে গারো সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে গেছে। তবে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এবং মৃত্যুর পরও মানুষের জীবনপ্রণালীই তার সংস্কৃতি। আমার বাবা-মা আমাকে যে সংস্কৃতি দিয়ে গেছেন, সেটাই আমার সংস্কৃতি। যেটা বাবা-মা দিয়ে যাননি সেটা আমার কালচার হতে পারে না। মানুষের মধ্যে মুসলমানের নাম এক রকম আবার হিন্দুদের নাম আরেক রকম। তাদের পোশাক পরিচ্ছদও এক নয়। তাই যার যার সংস্কৃতি তাকেই ধারণ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন খ্রিস্টান জন্মের পর তার নানা কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় ধর্ম অনুযায়ী, সে অনুযায়ী তাকে গড়ে তোলা হয়। জীবন ব্যবস্থাও সেভাবেই হয়। একজন গারোকে যখন তার মা তাকে গর্ভে ধারণ করেন, এ অবস্থায় অসুস্থ হলে তার জন্য গারো দেবতার পূজা করে, যাতে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট না হয়। জন্ম নিলে দেবতার পূজা করা হয়, যাতে তার ক্ষতি না হয়। ধর্ম অনুযায়ী তার নামকরণ হয়, বিয়েও সেভাবে হয়। যখন মারা যান, সে অনুযায়ী তার শেষকৃত্য হবে। তার মরণোত্তর আত্মার শান্তির জন্য সে অনুযায়ী হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন—ওয়াইডব্লিউসিএ-এর পরিচালক রুমা সাংমা, ডন বস্কো স্কুল অ্যাণ্ড কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল রুমন রাংসা, ডন বস্কো স্কুল অ্যাণ্ড কলেজের শিক্ষক সাগর রাংসা, ডন বস্কো স্কুল অ্যাণ্ড কলেজ প্রভাষক নিউটন দারিং, বিরিশিরি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরভি মান্দা, বিরিশিরি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক লুদিয়া মালঞ্চ সাংমা, ডন বস্কো কলেজের প্রভাষক ক্রিস্টি চর্যা রাংসা এবং বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমের সাংবাদিকরা।
আরও পড়ুন:
বার্তার আয়োজনে আড্ডা-আলোচনায় গারো আদিবাসীরা
‘অন্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিশে নিজস্ব ভাষা ভুলে যাচ্ছে গারোরা’
বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমের মতো গণমাধ্যম খুবই প্রয়োজন