২৩ নভেম্বর জলদস্যু-অস্ত্র কারিগরদের কলঙ্কমোচন!

কক্সবাজার, দেশের খবর

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, কক্সবাজার | 2023-08-27 22:04:53

কক্সবাজারের মহেশখালী-কুতুবদিয়া, চকরিয়া ও পেকুয়ার দেড় শতাধিক জলদস্যু ও অস্ত্র কারিগর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আত্মসমর্পণ’ করতে যাচ্ছে। বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ জমা দিয়ে দস্যু জীবন থেকে আলোর পথে ফেরার সম্মতি জানিয়েছেন এসব দস্যু ও অস্ত্র কারিগররা।

আগামী ২৩ নভেম্বর কক্সবাজার পুলিশ লাইনস মাঠ অথবা মহেশখালীর কালারমারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে হতে পারে আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিক সূচি প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো জানানো হয়নি। তবে, অনুষ্ঠানের জন্য কক্সবাজার পুলিশ লাইনস ও কালারমারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পরিদর্শন করেছে পুলিশের একটি প্রতিনিধি দল।

২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর র‍্যাবের মাধ্যমে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার ৪৩ জলদস্যু আত্মসমর্পণের পর থেকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় অনেক শীর্ষ জলদস্যু ও অস্ত্র কারিগর। যার কারণে বিভিন্ন পাহাড় ও সাগর উপকূলে অভিযান বৃদ্ধি করে পুলিশ। অভিযানের মুখে আবারো আত্মসমর্পণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া ও পেকুয়ার অন্তত দেড় শতাধিক জলদস্যু ও অস্ত্র কারিগর। যারা ইতিমধ্যে সেফ হোমে চলে গেছেন। এসব দস্যুদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের কারণে যুগ যুগ ধরে মহেশখালী-কুতুবদিয়াসহ পুরো উপকূলীয় এলাকায় অশান্তি বিরাজ করত।

আত্মসমর্পণের মধ্যস্থতাকারী একটি বেসরকারি টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি এম.এম আকরাম হোসাইন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে আগামী ২৩ নভেম্বর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ঐদিন দেড় শতাধিক দস্যু ও অস্ত্র কারিগর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রাথমিক ধাপ পার করবেন। আকরাম আরও জানান, আত্মসমর্পণকারীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রণোদনাসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

সেফ হোমে চলে এসেছেন যারা- মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ার আলোচিত জিয়া বাহিনীর জিয়াউর রহমান জিয়া ও তার সদস্য মানিক, আয়াতুল্লাহ, আব্দুস শুক্কুর, সিরিপ মিয়া, একরাম, নাজেম উদ্দিন, আয়ুব আলী, সিরাদোল্লাহ, সাদ্দাম, বশিরসহ অন্তত ১৫ জন। কালামারছড়ার কালা জাহাঙ্গীর বাহিনীর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম, সদস্য আবুল, সোনা মিয়া, জমির উদ্দীনসহ প্রায় ১৫ জন।

একই ইউনিয়নের নোনাছড়ি মোহাম্মদ উল্লাহর বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ আলী, সেকেন্ড ইন কমান্ড করিম ওরফে বদাইয়া, এরফান, রফিকসহ ১৫ জন। উত্তর নলবিলার মুজিব বাহিনীর প্রধান মজিবুর রহমান প্রকাশ শেখ মুজিব। হোয়ানকের শীর্ষ জলদস্যু ও অস্ত্র কারিগর আলোচিত আয়ুব আলী বাহিনীর প্রধান আয়ুব আলী ও তার বাহিনীর আরও ২০ সদস্য। কুতুবদিয়া উপজেলার লেমশীখালীর কালু বাহিনীর প্রধান মো. কালু প্রকাশ গুরা কালুসহ তার বাহিনীর ১৫/২০ জন। এছাড়া মহেশখালীর সোনাদিয়ার বেশ কয়েকজন জলদস্যু অস্ত্র নিয়ে সেমহোমে চলে এসেছে। আগামী দু’একদিনের মধ্যে অনেক দস্যু ও অস্ত্র কারিগর আত্মসমর্পণের জন্য সেফহোমে আসবে বলেও জানা গেছে।

এদিকে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ১০২ ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণের পর দ্বিতীয় আত্মসমর্পণের জন্য সেফ হোমে চলে আসে সীমান্ত জনপদ উখিয়া-টেকনাফের অন্তত ৪৩ ইয়াবা কারবারি। এসব ইয়াবা কারবারিরাও একইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে ইয়াবা ও অস্ত্র জমা দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানা গেছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে এসব জলদস্যুকে শান্তির পথে আসার আহ্বান জানিয়ে আসছে। তাদের সাড়া পাওয়ায় এ আত্মসমর্পণ কার্যকর করা হচ্ছে। আগামী ২৩ নভেম্বর এর আনুষ্ঠানিকতা হতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদসহ ৪৩ জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে। এরপর চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ইয়াবা ও অস্ত্রসহ টেকনাফে আত্মসমর্পণ করে ১০২ জন ইয়াবা কারবারি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর