৭ ঘণ্টায় হত্যা করা হয় তেরশ্রী গ্রামের স্বাধীনতাকামী ৪৩ জনকে

মানিকগঞ্জ, দেশের খবর

খন্দকার সুজন হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, মানিকগঞ্জ | 2023-08-25 18:11:16

১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর। কুয়াশাচ্ছন্ন কাক ডাকা ভোর। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ তখন ঘুমিয়ে। এমন সময় গ্রামের দুই দিক দিয়ে প্রবেশ করে পাক হানাদার বাহিনীর বড় বড় দু’টি গ্রুপ। আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুরো গ্রামজুড়ে।

বাড়ির পর বাড়ি ঘিরে ফেলে হানাদার বাহিনী। পুরো গ্রাম জুড়ে চলে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। মাত্র সাত ঘণ্টায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় পুরো গ্রাম। নারকীয় হত্যার পাশাপাশি লুটতরাজ ও ধর্ষণে মেতে ওঠে পাক হানাদারেরা। বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে, গুলি করে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় স্বাধীনতাকামী ৪৩ জনকে।

জমিদার সিদ্ধেশ্বর প্রসাদ রায় চৌধুরী ও তেরশ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানও রক্ষা পাননি হায়েনাদের আক্রমণ থেকে। স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের তেরশ্রী গ্রামে এভাবেই সেদিন নারকীয় গণহত্যা চালায় পাক হানাদার বাহিনী।

হত্যাযজ্ঞের শিকার হওয়া অনেকের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন এখনো। সরকারি সাহায্য সহযোগিতা ও স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন এসব পরিবারের সদস্যরা। শহীদদের স্মরণে তেরশ্রীতে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। ২২ নভেম্বর দিনটিকে পালন করা হয় তেরশ্রী গণহত্যা দিবস হিসেবে।

তেরশ্রী ঘোষপাড়ার নরেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, একাত্তরের সেদিন কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে আটজন শ্রমিকসহ বাড়ির পাশের জমিতে কাজ করতে যান তিনি। ওই সময় খবর আসে, গ্রামের সেনপাড়ার বিভিন্ন বাড়িতে আগুন দিচ্ছে পাক হানাদার বাহিনী। খবর পাওয়া মাত্রই নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার আগেই পুরো এলাকা দখলে নেয় হানাদার বাহিনী। চোখের সামনে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মানুষ হত্যার দৃশ্য দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে যান তিনি। বাড়িতে এসে জানতে পারেন, তার বাবা জ্ঞানেন্দ্র ঘোষকে বাড়িতে এসে গুলি করে হত্যা করে লাশ বাড়ির সামনে ফেলে রেখে গেছে হানাদার বাহিনী।

নেপাল ঘোষ শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন গুলির চিহ্ন, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে আহত নেপাল ঘোষ জানান, বাড়ির সামনে বসে ছিলেন তিনি। ওই সময় স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় তার বাড়িতে আক্রমণ করে হানাদারেরা। গুলি করে মৃত ভেবে তাকে ফেলে রেখে যায় তারা। এরপর দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হন তিনি।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পয়লা ইউয়িনের সভাপতি শাহজাহান মিয়া বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, ২২ নভেম্বরের সেদিনটি আজও ভুলতে পারেনি তেরশ্রীবাসী।

সেদিন যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর