চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার হেমায়েতপুর গ্রামের সাখাওয়াত হোসেন বাবুল। শিক্ষকের ছেলে সাখাওয়াত একজন সাদামাটা মানুষ। এলাকায় অনেকে তাকে গাছ পাগল সাখাওয়াত বলেও ডাকে। মাল্টা চাষ করে দেশসেরা কৃষকের পুরস্কার রয়েছে তার ঝুলিতে।দেশের সবচেয়ে বড় মাল্টার বাগানের মালিকও এখন সাখাওয়াত।
সরকারি চাকরিজীবী হলেও নিজের ইচ্ছা শক্তি দিয়ে গ্রামে গড়ে তুলেছেন ৪০ বিঘা জমিতে মাল্টার বাগান। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, সাখাওয়াতের বাগানটি এখন দেশের সব থেকে বড় মাল্টার বাগান।
প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ না থাকায় তার এই বাগান গড়ে তোলার শুরুর গল্পটা সহজ ছিল না। মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কোন মাঠ কর্মীর সহযোগিতাও পাননি তিনি। শৈশব থেকে গাছের প্রতি প্রেম সাখাওয়াতের। চারা কিনে এনে বাড়ির আশপাশে গাছ লাগাতেন।
২০১৩ সালে খুলনা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বারী-১ জাতের ২০টি মাল্টার চারা কেনেন। স্বল্প পুঁজি দিয়ে গাছ লাগানোর এক বছরের মাথায় গাছগুলো কলম করে চারা গাছ তৈরি করেন সাখাওয়াত। এরপর গ্রামের কৃষকের কাছ থেকে ২৪ বিঘা জমি লিজ নিয়ে প্রায় চার হাজার কলম মাল্টার চারা গাছ রোপণ করেন। বর্তমানে একই দাগে ৪০ বিঘা জমিতে মাল্টার বাগান আছে সাখাওয়াতের। গাছ লাগানোর দুই বছর পর ফুল আসতে শুরু করে মাল্টার চারাগুলোতে। বর্তমানে সাখাওয়াতের বাগানে ডালে ডালে ঝুলছে মাল্টা।
মাল্টা চাষি সাখাওয়াত জানান, মাল্টা বাগান করতে ৫ বছরে এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে ২৯ লাখ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে বছরে ৬০-৭০ মণ মাল্টা ফল পাওয়া যাবে। যা বাজারে বিক্রি হবে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা। এছাড়া সমস্ত মাল্টার বাগানে মাল্টা বিক্রি হবে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার মতো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মাল্টার ফলন ভাল হয়। প্রতি কেজি মাল্টা ৮০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বর্তমান বাজারে।
তিনি আরও বলেন, উচু জমিতে মাল্টার চারা রোপণ করতে হয়। বাগানে রাসায়নিক সারের চেয়ে জৈব সার বেশি ব্যবহার করা হয়। প্রথমে গ্রামে যখন মাল্টার বাগান করি তখন প্রতিবেশীরা বলতেন সাখাওয়াত গাছ পাগল। তারা টিটকারি করে বলতো টাকা বেশি হয়েছে তাই কাঁচা পয়সা পানিতে ফেলছে। আজ সেসব প্রতিবেশীরাই আমাকে উৎসাহ দেয় বেশি।
মাল্টা বাগান করে সাখাওয়াত একাই যে লাভবান হয়েছে এমনটা না। তার বাগানে কাজ করে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন ১২ জন শ্রমিক।
গ্রামের চেয়ারম্যান আজিজুল হক বলেন, সাখাওয়াতের ৪০ বিঘা জমিতে ওপর চার হাজার মাল্টার গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে মাল্টা ঝুলে মাটিতে নুয়ে পড়ে আছে। তার এই সাফল্য দেখে গ্রামের অন্য বেকার যুবকরাও মাল্টার বাগান তৈরি করছে।
সাখাওয়াতের প্রতিবেশী আকতার হোসেন জানান, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাখাওয়াতের মাল্টার বাগান দেখতে আছে ফল ব্যবসায়ীরা। এদের ভেতর বেশির ভাগই সাখাওয়াতের কাছে থেকে মাল্টার চারা কিনে নিয়ে যান। অনেকে আবার মাল্টা বাগান তৈরির পরামর্শ নিতে আসেন। সবকিছু মিলে ছোট্ট গ্রামের সাখাওয়াত এখন বাংলাদেশের মাল্টা বাগানের আইডলে পরিণত হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার মনিরুজ্জামান জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাখাওয়াতের মাল্টার বাগান দেখতে এসেছেন বাগান চাষিরা। কৃষি বিভাগ থেকে মাল্টা চাষি সাখাওয়াতকে সব রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে।