রংপুরের পীরগাছা চরাঞ্চলে বীজ বাদাম চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। সহজে চাষযোগ্য, উৎপাদন খরচ কম ও অধিক লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে বীজ বাদামের চাষ।
ধান চাষ কমিয়ে অর্থকরী ফসল হিসেবে এখন কৃষকরা বীজ বাদাম চাষ করছেন। বছর দুই আগেও পীরগাছার কৃষকরা পাশ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ও কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলা থেকে বীজ বাদাম সংগ্রহ করতো। তবে দিন পাল্টেছে। বর্তমানে অনেকেই নিজেদের উৎপাদিত বীজ দিয়েই বাদাম চাষ করছেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে পীরগাছা উপজেলার চরাঞ্চলে বীজ বাদাম চাষ হতো মাত্র ৫০ হেক্টর জমিতে। এখন চাষের এলাকা দুই’শ হেক্টর ছাড়িয়ে গেছে। আগামী মৌসুমে পীরগাছার চরাঞ্চলে একশ ৮০ হেক্টর জমিতে বীজ বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ অঞ্চলে সাধারণত ঢাকা-১, বিনা-৬, বিনা-৭, বারি চিনা বাদাম-৬, বারি-৭ ও বারি-৮ জাতের বাদাম চাষাবাদ হয়। তবে বারি-৮ জাতের বাদাম বীজে সবচেয়ে বেশি ফলন হয়। এ জাতের বাদাম কৃষকের কাছে হাইব্রিড বাদাম হিসেবে পরিচিত। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বাদাম রোপণের সময় আগাম বীজ বাদামের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় বীজ বাদামের দাম ভাল পাওয়া যায়।
কৃষকরা জানান, আমনধানের তুলনায় বাদাম চাষ লাভজনক। তাই অনেকে আমনধানের পরিবর্তে বীজ বাদাম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এক বিঘা জমিতে বীজ বাদাম চাষ করতে সব মিলিয়ে খরচ হয় প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা। ফসল উঠতে সময় লাগে তিন থেকে সাড়ে তিন মাস। বিঘা প্রতি গড়ে ছয় মণ বাদাম মেলে। প্রতি মণ বীজ বাদাম প্রায় সাত হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের চর গাবুড়ার কৃষক খয়বর হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘ধানের দাম কম, তাই আমন ধানের পরিবর্তে বীজ বাদাম চাষ করেছি। গত বছর বীজ বাদাম চাষ করে ভাল লাভ পেয়েছিলাম। তাই এবারও চাষ করেছি। ফলনও ভাল হয়েছে। নিজের জমিতে বীজ বাদাম রোপণ করার পর বাড়তি বীজ বিক্রি করে আয় করতে পারবো।’
জুয়ানের চরের কৃষক আতিয়ার রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘এ বছর ২০ শতাংশ জমিতে বীজ বাদামের চাষ করেছি। মনে হচ্ছে বাদাম রোপণের সময় আর বাইরে থেকে বীজ বাদাম কিনতে হবে না।’
ছাওলা ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে বীজ বাদাম উৎপাদনে কৃষকদের বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। আশা করছি এবারে বীজ বাদামের ফলন ভাল হবে এবং কৃষকরা লাভবান হবেন।’
পীরগাছা উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল লতিব বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘পীরগাছায় বীজ বাদামের চাষ বাড়ছে। তারপরও বাইরে থেকে বীজ সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে যাতে বাইরে থেকে বীজ সংগ্রহ না করে নিজেরাই উৎপাদন করা যায় উপজেলা কৃষি বিভাগ সেই চেষ্টা করছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘অর্থকরী ফসল হিসেবে বাদাম ইতোমধ্যেই জনপ্রিয় হয়েছে। বীজ বাদাম চাষ করে চরাঞ্চলের কৃষকেরা ধানের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন। তাই কৃষকেরা বীজ বাদাম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।’