গরুর ভাইরাস জনিত লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাবে মেহেরপুর জেলার গবাদিপশু পালনকারীরা এখন দিশেহারা। এই রোগে আক্রান্ত গরুর গায়ে গুটি বের হতে দেখা যায়। পরবর্তীতে গায়ে প্রচণ্ড ব্যথায় গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকায় গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন খামারি ও গরু পালনকারীরা।
মেহেরপুর জেলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে গরু পালন। জেলার প্রতিটি বাড়িতেই এখন গরু পালন করা হচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামার বৃদ্ধি পাচ্ছে। গরু পালনে অনেকের সংসারে সচ্ছলতা এনেছে। পাশাপাশি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু নতুন এই রোগের কারণে শঙ্কিত গরু পালনকারীরা। জেলার বিভিন্ন প্রাণি সম্পদ হাসপাতালে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চারশ আক্রান্ত গরু চিহ্নিত হয়েছে। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে এই রোগ। প্রতিদিনই নতুন আক্রান্ত গরু চিহ্নিত হচ্ছে।
গরু পালনকারী চৌগাছা গ্রামের গোলাম মোস্তফা ডাকু বলেন, গাভী গরুগুলো বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এতে প্রয়োজনীয় দুধ না পাওয়ায় বাছুর পালন করতে কষ্টের সীমা নেই। অন্যদিকে গরুর শরীরে ব্যথা ও ঘা স্থানে মশা-মাছি পড়ে অস্থির করে রাখছে।
একই গ্রামের গরু পালনকারী মুরাদ আলী বলেন, এ রোগ হলে চিকিৎসা কী হবে সে বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণা নেই। প্রাণি সম্পদ হাসপাতালেও কোনো চিকিৎসা নেই। শুধু জ্বর ও ব্যথার ইনজেকশন দিচ্ছে। এতে আক্রান্ত গরুর ফোলা ও গুটি সারতে অনেক সময় লাগছে। অনেক টাকা খরচ হচ্ছে।
শিশিরপাড়া গ্রামের গরু পালনকারী আনোয়ারা খাতুন বলেন, আমরা গরু পালন করে সংসার চালাই। এখন সংসারের খরচ জোগাড় করবো না গরু চিকিৎসা করাবো তা নিয়ে চিন্তার সীমা নেই। এক মাস ধরে আমার গাভীর গায়ে পক্সের মতো গুটি বের হয়ে আছে। সব সময় গরু নিয়ে পড়ে আছি।
খামারিরা প্রাণি সম্পদ হাসপাতালে গিয়েও চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এর কোনো প্রতিষেধক টিকা নেই, নেই কোনো চিকিৎসা। ফোলা ও ব্যথার ওষুধ দেওয়া ছাড়া প্রতিরোধমূলক কোনো চিকিৎসা করতে পারছেন না চিকিৎসকরা।
প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তারা জানান, লাম্পি স্কিন ডিজিজ মাছি, মশা, ব্যবহৃত নিডল ও সিরিঞ্জ একাধিকবার ব্যবহারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। রোগাক্রান্ত হলে গরুর দুধ উৎপাদন কমে যায়, গবাদিপশু দুর্বল হয়ে পড়ে, ওজন কমে যায়, চামড়ার গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। গত ২ মাসে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে মেহেরপুর সদর উপজেলায় ১৯৭টি, গাংনী উপজেলায় ১৫৬টি ও মুজিবনগর উপজেলায় ৭৫টি গরু।
পশু পালনকারীরা বলছেন, এখনই এর প্রতিকার করতে না পারলে এ জেলার ২১০টি দুগ্ধখামার ও গরু লালন পালনের ৪৩৫টি খামার মালিক অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে। পথে বসতে পারেন ব্যক্তি পর্যায়ে কয়েক হাজার গরু পালনকারী দরিদ্র মানুষ।
প্রসঙ্গত, লাম্পি স্কিন ডিজিজ ১৯২৯ সালে প্রথম জাম্বিয়াতে দেখা যায়। এরপরে আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। মধ্যপ্রাচ্যে ২০১৩ সালে এবং ২০১৫ সালে আর্মেনিয়া, কাজাখস্তান, আজারবাইজান ও আশেপাশের দেশে দেখা যায়। সার্বিয়া, বুলগেরিয়ায়, সাইপ্রাস ও কসোভোতে ২০১৬ সালে লাম্পি স্কিন ডিজিজ দেখা দেয়।এ বছর এশিয়া মহাদেশের চীন ও ভারতের কিছু কিছু অঞ্চলে দেখা গেছে।