২০১০ সালে প্রথমবারের মতো অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য চালু হয়েছিল জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা পদ্ধতি। ওই বছর কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন ৬টি জেলা থেকে অংশগ্রহণ করা সব শিক্ষার্থী পাস করেছিল। তবে এরপর থেকে গত নয় বছরে অনুষ্ঠিত জেএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে দেড় লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়ে ছিটকে পড়েছে।
কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নিয়ে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড গঠিত।
শিক্ষার্থীদের অকৃতকার্য হওয়ার বিষয়টি নিয়ে অনেক অভিভাবকরা দাবি করেছেন, শিক্ষার্থীদের স্কুল জীবনের মধ্যখানে জেএসসি পরীক্ষার আসলে কোন যৌক্তিকতাই নেই। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যায় মাঝ পথে।
বোর্ড সূত্র জানায়, সবশেষ অনুষ্ঠিত হওয়া ২০১৯ সালের জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন ৬টি জেলার ১ হাজার ৯শ’ ৩০টি বিদ্যালয়ের ২ লাখ ৬১ হাজার ৯শ’ ৬ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিল। তবে পরীক্ষায় অংশ নেয় ২ লাখ ৪২ হাজার ৪শ’ ৯০ জন। এ বছর জেএসসি থেকে ছিটকে পড়ে ১৯ হাজার ৪শ’ ১৬ শিক্ষার্থী।
জেএসসি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হবার পর শুধুমাত্র ২০১০ সালেই কোনো পরীক্ষার্থী ঝরে পড়েনি কুমিল্লা বোর্ডে। এরপর থেকে প্রতি বছরই অনেক শিক্ষার্থী ছিটকে পড়েছে এই পরীক্ষা থেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় গত ৯ বছরে ছয়টি জেলার স্কুলগুলো থেকে মোট ২২ লাখ ৭২ হাজার ৬শ’ ৯৯ শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করে। এদের মধ্যে ২১ লাখ ১৫ হাজার ১শ’ ২৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫শ’ ৭২ জন শিক্ষার্থী ফেল করে জেএসসি থেকে ছিটকে পড়ে।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৮শ’ ৭৬ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ঝরে পড়ে ১১ হাজার ৫শ’ ২৪ শিক্ষার্থী। ২০১২ সালে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২শ’ ৬১ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ঝরে পড়ে ১৩ হাজার ৮শ’ ৭০ জন। ২০১৩ সালে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৪শ’ ৯২ জনের মধ্যে ঝরে পড়ে ১১ হাজার ৮শ’ ৬৪ জন শিক্ষার্থী।
২০১৪ সালে ২ লাখ ১৪ হাজার ৩শ’ ৪৭ জনের মধ্যে ঝরে পড়ে ২৪ হাজার ১শ’ ৩৪ জন। ২০১৫ ঝরে পড়ে ১২ হাজার ৯শ’ ৮৫ জন। ২০১৬ সালে ১২ হাজার ৪শ’ ৬০ জন শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। ২০১৭ সালে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৬শ’ ১ জন অংশ নিয়ে ২২ হাজার ৩শ’ ৭৫জন শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। আর ২০১৮ সালে ২ লাখ ২৮ হাজার ৮শ’ ৮৪ জনের মধ্যে ঝরে পড়ে ২৮ হাজার ৯শ’ ৪৪ জন।
এদিকে, জেএসসি পরীক্ষা চালুর পর থেকেই তা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। অনেক অভিভাবকই জেএসসি পরীক্ষার যৌক্তিকতা নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের যুক্তি হচ্ছে, এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট দিয়ে শিক্ষার্থীরা কলেজে ভর্তি হয়। আর এইচএসসির সার্টিফিকেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু জেএসসিও স্কুলের একটি ধাপ। তাই এই পরীক্ষার কোন যৌক্তিকতাই নেই। বরং এসব বোর্ড পরীক্ষার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে অকালে।
এ বিষয়ে কথা হয় কুমিল্লার বরুড়া পৌরসভার তলাগ্রাম এলাকার বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে। তারা বলেন, আগে সবার টার্গেট থাকতো এসএসসিতে ভালো করা। আর এখন পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বোর্ড পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিতে হয়। এত পরীক্ষার চাপে শিক্ষা জীবনের শুরুতেই অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। আবার অনেকে ফেল করার পর লজ্জায়ও লেখাপড়া থেকে ছিটকে যায়। তাই পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার আসলে কোন যৌক্তিকতাই নেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো.আবদুস সালাম বলেন, দেশের অন্যান্য বোর্ডের চেয়ে কুমিল্লা বোর্ডে জেএসসিতে ঝরে পড়ার হার কম। আর শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে বিভিন্ন কারণে। যেমন বাল্যবিয়ে, দারিদ্র্য, পড়াশোনার প্রতি অনীহা, অভিভাবকদের অসচেতনতা এবং অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়া ইত্যাদি। তবে অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি আর শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগী হলে এভাবে ঝরে পড়ার হার অনেকাংশেই কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি।