আজ ২৭ নভেম্বর, ভোলার লালমোহনে কোকো-৪ লঞ্চ ট্রাজেডির ১০ বছর পূর্তি। ২০০৯ সালের এই দিনে রাত ১১টায় ঢাকা থেকে ভোলার লালমোহনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা এমভি কোকো-৪ লঞ্চ নাজিরপুর ঘাটের কাছাকাছি এসে ডুবে যায়। এতে প্রাণ হারান ৮৩ যাত্রী। দিনটিকে স্মরণ করে আজো আঁতকে ওঠেন স্বজনহারা মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা এখনো আতঙ্ক নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন। আজো উপেক্ষিত রয়েছে ভোলাবাসীর নিরাপদ নৌযানের দাবি।
ভোলা থেকে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম লঞ্চ। কিন্তু জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ঢাকায় যাতায়াতকারী অধিকাংশ লঞ্চই আকারে ছোট, ত্রুটিপূর্ণ, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ও অদক্ষ শ্রমিক দ্বারা চালানো হয়। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে, প্রাণ হারান অনেকে।
ওই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা যাত্রী আনোয়ার জানান, সেদিনের ঘটনা মনে পরলে লঞ্চে ঢাকায় যেতে ভয় লাগে তার। একটু ঝড় বা বাতাস হলেই ভয় পান তিনি।
স্বজনহারা রহমান জানান, ওই দুর্ঘটনায় তিনি তার ভাইয়কে হারান। ভাইকে হারিয়ে ৯ বছর আগে যে কান্না শুরু হয়েছিল তা আজো থামেনি।
এ ব্যাপারে ভোলা নিরাপদ নৌযান বাস্তবায়ন কমিটির নেতা ও ভোলা বারের আইনজীবী নজরুল হক অনু বলেন, ‘ভবিষ্যতে যাতে কোকোর মতো এমন দুর্ঘটনা না ঘটে সে লক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদাড়ি করতে হবে এবং অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করা লঞ্চের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
শুধু কোকো-৪ নয়, এমভি নাসরিন, এমএল উপদ্বীপ এবং সামিয়া লঞ্চ দুর্ঘটনাসহ অনেকগুলো নৌদুর্ঘটনায় ভোলার শত শত মানুষের মৃত্যুর পরও কর্তৃপক্ষ ভোলাবাসীর জন্য নিরাপদ নৌযান নিশ্চিত করেতে পারেনি। তবে নৌযানের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘ভোলার প্রতিটি নৌ-রুটে তাদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে, যাতে কেউ ফিটনেস বিহীন লঞ্চ চালাতে না পারে।’
জেলার সাত উপজেলা থেকে ঢাকা-ভোলা ও ভোলা বরিশালসহ বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন শতাধিক লঞ্চ চলাচল করে। এর অধিকাংশ ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় যাত্রীরা চরম আতঙ্কের মধ্যে যাতায়াত করছেন। যাত্রীদের এই আতঙ্ক দূর করতে কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, এমনটাই প্রত্যাশা ভোলাবাসীর।