বঙ্গবন্ধু সেতুতে প্রবেশের আগেই ওজন স্টেশনে প্রবেশ নিয়ে চালকদের ভোগান্তির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই ভোগান্তি বর্তমানে চরম আকার ধারণ করেছে। সেতুতে প্রবেশের আগে স্থাপিত ওজন স্টেশনে উঠতেই যানবাহনের ওজন যাচ্ছে বেড়ে।
ওজন স্টেশনের প্রবেশ পথের তিনটি লেনের সড়ক খানখন্দে পূর্ণ। প্রায় দুইশ’মিটার এলাকাজুড়ে চার-পাঁচ ইঞ্চি করে সড়ক দেবে গেছে। খানাখন্দের কারণে ওজন স্টেশনে প্রবেশের সময় ঝাঁকুনিতে যানবাহনের পরিমাপ যেমন বাড়ছে সেই সঙ্গে যানবাহনগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর ঝাঁকুনিতে বিকল হয়ে পড়া যানবাহন অপসারণ করতে রেকার বিল দিতে হচ্ছে চালকদের। যেসব যানবাহনের ওজন বেশি ধরা পড়ছে সেগুলোকে ৫০ টাকার রশিদের মাধ্যমে স্টকইয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে।
সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয় পাড়ে ট্রাকসহ ভারী যানবাহনের পরিমাপের জন্য আলাদা লেন তৈরি করা হয়েছে। এতে সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে ছয়টি লেনে ওজন পরিমাপক যন্ত্র বসিয়ে যানবাহনের ওজন পরিমাপ করা হচ্ছে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)।
জানা গেছে, গত এক বছর আগে ওজন স্টেশনের সড়কে সংস্কার কাজ করা হয়। এতে সড়কে সিলকোট করে সংস্কার কাজ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সড়ক সংস্কার করার মাস দুই পরেই সড়ক দেবে যায়। সড়ক জুড়ে তৈরি হয় খানাখন্দ। এতে গাড়িগুলো ওজন স্টেশনে উঠতে ঝাঁকুনিতে ওজন বেড়ে যায়।
অন্যদিকে চার-পাঁচ ইঞ্চি পর্যন্ত সড়ক দেবে যাওয়ায় যানবাহনগুলো দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। দীর্ঘদিন যাবত সড়কের এমন বেহাল দশা থাকলেও সংস্কারের উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের।
সেতু এলাকায় দায়িত্বরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নিরাপত্তাকর্মী জানান, যানবাহনের চালকরা সড়কের বেহাল দশার জন্য নিরাপত্তাকর্মীদের গালমন্দ করেন। সড়ক দেবে যাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। সড়কেই গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে।
মহাসড়কে চলাচলকারী চালকদের অভিযোগ, বঙ্গবন্ধু সেতু পারাপারে টোল দিলেও সেতুতে প্রবেশের আগে যে সড়কের বেহাল দশা সেটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। সড়কে খানাখন্দের কারণে গাড়ি চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। মালামালসহ গাড়ির ওজন সঠিক থাকলেও ওজন স্কেলে প্রবেশ করতেই গাড়ির পরিমাপ বেড়ে যায় খানাখন্দের কারণে। আবার সড়ক দেবে যাওয়ায় গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি সরাতে সেতু কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছ থেকে রেকার বিল নিচ্ছে ৪-৫ হাজার টাকা করে। এছাড়া ওজন বেশি হওয়ায় গাড়ি ঘুরিয়ে স্টকইয়ার্ডে পাঠাচ্ছে। এতে আরও ৫০ টাকা করে দিতে হচ্ছে।
নাম গোপন রাখার শর্তে সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানান, কয়েক মাস ধরে ওজন স্টেশনের এই সড়কের বেহাল দশা। গাড়ির চালকরা বেশি উত্তেজিত হলে তখন কিছু বালু আর খোয়া ফেলে দায় সারা হয়। আবার অনেক সময় শুধু মাটিযুক্ত বালু ফেলা হয় লোকজন দিয়ে। এতে ধুলায় ওজন স্টেশন এলাকার বায়ু দূষিত হচ্ছে। ওজন স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে যে কর্মকর্তা আছেন তিনি প্রতিদিন দিনমজুর দিয়ে সড়কে টুকিটাকি কাজ করেন আর বিল তোলেন।
বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের রক্ষণাবেক্ষণ কর্মকর্তা রতন জানান, ওজন স্টেশনের সড়ক দেবে যাওয়া ও খানাখন্দ সংস্কার কাজের জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সড়কটি দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল ও বৃষ্টির পানিতে এমন বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রতিনিয়ত সড়কে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে।