দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মেলেনি মুক্তিযোদ্ধা সনদ

গাইবান্ধা, দেশের খবর

তোফায়েল হোসেন জাকির,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,গাইবান্ধা | 2023-08-30 04:46:35

‘জীবনের মায়া ত্যাগ করে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। আমার সহযোদ্ধারা সবাই বিজয়ের স্বাদ নিচ্ছেন। তারা পাচ্ছেন সরকারের নানা সুবিধা। অথচ প্রত্যয়নপত্র নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাইনি আমি। বছর শেষে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর শুরু হলেই মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে হাসি ফুটে উঠে। অথচ বিজয়ের মাস ডিসেম্বর আসলেই আমার মন কাঁদে।’

কাঁদতে কাঁদতে এসব কথা বলেন গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের চকগোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন।

১৯৭১ সালে আমজাদ হোসেন ছিলেন টগবগে যুবক। সে সময় দেশকে স্বাধীন করার নেশায় জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধে অংশ নেন লাখো যুবক। আমজাদ হোসেনও তাদের মধ্যে একজন। বর্তমানে তার বয়স প্রায় ৭৭ বছর। কিন্তু দারিদ্র্যের কষাঘাতে সীমাহীন কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে তাকে।

জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ১১নং সেক্টরের কমান্ডার আলতাফ হোসেন ও মনছুর আলীর অধীনে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধ চলাকালীন মাদারগঞ্জ-মীরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন তিনি।

আমজাদ হোসেন যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করলেও, আজ জীবনযুদ্ধে তিনি পরাজিত সৈনিক। দেশ স্বাধীনের ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা বা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি।

আমজাদ হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি বাংকার খনন ও রান্না করে মুক্তিবাহিনীর খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। স্থানীয় কবিরাজের বাড়ির পশ্চিমে একটি বাঁশঝাড়ের নিচে ২ নং বাংকার খনন করা হয়। এছাড়া সাদুল্লাপুর-বড় দড়গাহ রাস্তার পশ্চিম স্থানে হানাদার বাহিনীর চলাচল রোধ করতে রাস্তা কেটেছিলাম।’

এদিকে, ওই যুদ্ধে সফলভাবে অংশগ্রহণ করায় তৎকালীন সেক্টর কমান্ডার আমজাদ হোসেনকে একটি সনদপত্র দেন। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর আমজাদ হোসেনের বাড়িতে আগুন লেগে সনদপত্রটি পুড়ে যায়। পরবর্তীতে সাদুল্লাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড মেছের উদ্দিন এবং সাবেক সংসদ সদস্য আবু তালেব মিয়া স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয় তাকে। এসব প্রত্যয়নপত্র নিয়ে বিভিন্ন জায়গা ঘুরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি আমজাদ হোসেন।

বর্তমানে এই অস্বীকৃত বীর যোদ্ধা স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে জীবনযাপন করছেন। তাই শেষ বয়সে সরকারের কাছে আকুতি করেছেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আবদুর জলিল আজমী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমজাদ হোসেনকে নিয়ে আমি বিভিন্ন স্থানে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করেছিলাম। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার স্বীকৃতি না পাওয়া খুবই দুঃখজনক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর