আজ ৬ ডিসেম্বর, হবিগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যদের হবিগঞ্জ ত্যাগ করতে বাধ্য করে। মুক্ত হয় হবিগঞ্জ জেলা।
দিবসটি উপলক্ষে শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হবিগঞ্জ সদর উপজেলা ইউনিট। সকাল ১০টায় মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতিসৌধ দুর্জয় থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হবে। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ। এছাড়াও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় তেলিয়াপাড়া ডাকবাংলো থেকে সারাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর বিভক্ত করা হয়। ৩ নম্বর সেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন মেজর শফিউল্লাহ। শফিউল্লাহর নেতৃত্বে হবিগঞ্জের সীমান্ত এলাকার দুর্গম অঞ্চলগুলোতে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ সংগঠিত হয়। ডিসেম্বরের শুরুতে মুক্তিবাহিনী জেলা শহরের কাছাকাছি এসে পৌঁছালে তিন দিক থেকে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করে।
হবিগঞ্জ মুক্ত হওয়ার কয়েকদিন আগে শহরের বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শায়েস্তনগর ও উমেদনগরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রচণ্ড গুলি বর্ষণের মাধ্যমে তাদের আগমন বার্তা ঘোষণা করেছিল। যদিও এর আগেই অধিকাংশ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী হবিগঞ্জ শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
৬ ডিসেম্বর শীতের সকালে রক্তিম সূর্য তার তীক্ষ্ণতা দিয়ে বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের আরো সতেজ করে তুলে। শহরবাসী বাংলার দামাল মুক্তিযোদ্ধাদের অভিবাদন জানায়। তারা জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে মুক্ত হবিগঞ্জ শহরের রাস্তায় নেমে এসে বিজয়ের উল্লাস প্রকাশ করে।
দিনটির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত ল্যান্স নায়েক ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডার আব্দুস শহীদ বলেন, ৩নং সেক্টরের একটি প্লাটুন ২ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ শহরের পাশে এসে আস্তানা গাড়ে এবং দুই জন দালালকে আটক করে হত্যা করা হয়। আটক করা হয় ১২জন রাজাকার। পরে ৫ ডিসেম্বর ঘেরাও করা হয় হবিগঞ্জ শহর। তখন পাক সেনার পালিয়ে যায়। ৬ ডিসেম্বর সকালে আমরা শহরে প্রবেশ করি এবং থানায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করি।
এদিকে, একই দিন হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট ও নবীগঞ্জ উপজেলায়ও মুক্ত হয়েছিল। মুক্তদিবস উপলক্ষে ওই দুটি উপজেলায়ও বিশেষ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধারা।