শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক-কর্মচারী সংকট, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে বাস এবং লাইব্রেরিতে বই সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহৎ বিদ্যাপিঠ রাঙামাটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।
নানামুখী তৎপরতায় অবশেষে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক মানোন্নয়নে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সাড়ে ১০কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পাল্টে যাবে রাঙামাটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সার্বিক পরিস্থিতি।
১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে পাহাড়ি জনপদের প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষার্থীর অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রাঙামাটির দুর্গম উপজেলাগুলোসহ আশপাশের জেলার শিক্ষার্থীদের মাঝে উচ্চ শিক্ষার বীজ বপন করে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণকারী অগণিত শিক্ষার্থীরা বর্তমানে সারাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘ ৫০ বছরের অধিক সময় ধরে পার্বত্য অঞ্চলকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা প্রাচীন এই বিদ্যাপীঠ দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক মানোন্নয়নে সম্প্রতি সরকারিভাবে ১০ কোটি ৪৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকার অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে, নির্মাণাধীন ২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন কাম পরীক্ষার হল নির্মাণ কাজ, অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাবসহ অন্যান্য ল্যাবের জন্য ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বর্তমান প্রশাসনিক ভবনটির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ, বহিরাগতদের অবাধে বিচরণ ঠেকাতে ৭০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ব্যয়ে কলেজের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, দুর্গম উপজেলা ও আশেপাশের জেলা থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে রাঙামাটি কলেজে আগত শিক্ষার্থীদের জন্য ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩২ শয্যা বিশিষ্ট ছাত্রী নিবাস নির্মাণ, ছাত্রী নিবাসে অবস্থানকারী ছাত্রীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সুউচ্চ বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। রাঙামাটির সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠে এসব কাজে সর্বমোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৪৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মঈন উদ্দীন উপরোক্ত তথ্য জানিয়ে বলেন, এসব উন্নয়ন কার্যক্রম স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাস্তবায়িত হয়ে যাবে। এতে করে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনার্সের বেশ কয়েকটি ডিপার্টমেন্ট স্থানান্তর করা হবে। পাশাপাশি ভবনটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে নতুন যুক্ত হতে যাওয়া অনার্স ও ডিগ্রি’র প্রিলি সাবজেক্ট সমূহের ডিপার্টমেন্ট ও শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা সহজতর হবে। এতে করে বর্তমান ভবনের শ্রেণিকক্ষ সংকটের সমস্যাটির অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে।
অধ্যক্ষ আরও বলেন, প্রশাসনিক ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজটি সম্পন্ন হলে বর্তমানে কম্পিউটার ল্যাবসহ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট’র যে ল্যাব সংকট রয়েছে তা লাঘব হবে। রাঙামাটি জেলা শহর ও উপজেলা সমূহ ছাড়াও এখানে পার্শ্ববর্তী জেলার অনেক ছাত্রীরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য এই কলেজে ভর্তি হয়। সর্বোপরি ছাত্রী হোস্টেলটি নির্মিত হলে দুর্গম অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত উপকারে আসবে। ছাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে আমরা সুউচ্চ সীমানা প্রাচীরও নির্মাণ করছি।
এছাড়া পূর্ববর্তী সময়ে কলেজ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন নাশকতামূলক ঘটনা ঘটেছে। তাই সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে কলেজের চারপাশে সীমানা প্রাচীরটি নির্মাণের বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বলেও জানান অধ্যক্ষ মঈন উদ্দিন।