অগ্রহায়ণ মানেই চারদিকে আমন ধানের মৌ মৌ গন্ধ। নতুন ধান ঘরে তুলতে শুরু হয় নবান্নের উৎসব। ধান ঘরে তোলা শেষ হলেই বাড়ি বাড়ি নানান রকমের বাহারি পিঠা-পুলির আয়োজন। এক সময় আবহমান বাংলার চিরায়ত রূপ ছিল এটি। কালের বিবর্তনে গ্রাম-বাংলার সেই রূপ হারালেও বাঙালির কাছে জনপ্রিয়তা কমেনি পিঠার। শীতের সময় গ্রামীণ সমাজে ঘরে ঘরে পিঠা তৈরির ধুম পড়লেও শহরের ব্যস্ত জীবনে এসব এখন হয়ে উঠে না। তাই বলে কি পিঠার স্বাদ গ্রহণ করবে না শহরের মানুষ?
শীতের সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে বসে ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান। একাধিক পিঠার সমাহার সেখানে না থাকলেও শীতের জনপ্রিয় ‘চিতই’ ও ‘ভাপা’ পিঠা বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। সন্ধ্যার পর সেখানে পিঠা খেতে ভিড় জমান নানা বয়সী লোকজন। অনেকে আবার যাওয়ার সময় পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্যও বাসায় নিয়ে যান এসব পিঠা।
অন্যদিকে, পিঠা বিক্রি করে অতিরিক্ত আয়ের পথ বেছে নিয়েছেন শহরের অন্তত ২৫/৩০টি পরিবার। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ এই পিঠার দোকান বসিয়েছেন তারা। পুরুষের পাশাপাশি একাধিক নারীও পিঠার দোকান বসিয়েছেন অলি-গলিতে। আবার তাদেরকে সহযোগিতা করছে তাদের ছেলে-মেয়েরা।
শহরের চৌধুরী জাজার, ঘাটিয়া বাজার, পিটিআই রোড, কালিবাড়ি, সদর হাসপাতালের মোড়, শায়েস্তাগর মোর, কোর্ট মসজিদ মার্কেট, পৌর বাস টার্মিনাল, পদ্দার বাড়ি, ধুলিয়াখাল এলাকাসহ অন্তত ২৫/৩০টি পিঠার দোকান বসেছে।
শায়েস্তানগর পয়েন্টে পিঠা খেতে আসা তরুণ নুরুল আমীন বলেন, ‘বাড়িতে সব সময় পিঠা তৈরি হয় না। তাই যখনই পিঠা খেতে মন চায় তখনই রাস্তার পাশের এসব দোকানে চলে আসি। ভাপা পিঠার পাশাপাশি গরম-গরম ধোঁয়া ওঠা চিতই পিঠা সিঁদল কিংবা সরিষা ভর্তা দিয়ে খেলে অসাধারণ লাগে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে অনেক সময় খারাপ লাগে যখন বিক্রেতারা ৫ টাকার পিঠা ১০ টাকা দাম নেন। গতবছর যে পিঠা ৫ টাকা দিয়ে খেয়েছি সেগুলো এখন ১০ টাকা দিয়ে খেতে হচ্ছে।’
থানার সামনে পিঠা খেতে আসা রুমেল খান বলেন, ‘প্রায় সময়ই বন্ধুরা মিলে ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে পিঠা খেতে আসি। সত্যি এই পিঠাগুলো অসাধারণ লাগে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শীতের সময় যে পিঠাগুলো আমরা খাই তা সারাবছর মনে থাকে। কারণ, এই পিঠাগুলো একদিকে যেমন সু-স্বাদু, তেমনি অন্যদিকে সবাই মিলে আড্ডা দিয়ে খেতে অনেক ভালো লাগে।’
কলেজছাত্রী শারমীন আক্তার বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে ঘরে পিঠা তৈরি করার সময় পাওয়া যায় না। প্রয়োজনে এখানকার পিঠার দোকানগুলোই ভরসা। এতে সময়ও বাঁচে শীতের আমেজও পাওয়া যায়। বলতে গেলে অসাধারণ।’
শায়েস্তাগঞ্জ পয়েন্টে পিঠা বিক্রি করেন মো. শাহজাহান মিয়া। তিনি বলেন, ‘এক সময় আমি টমটম (অটোরিকশা) চালাতাম। কিন্তু এখন পিঠা বিক্রি করছি। অল্প টাকার পুঁজি ও কম পরিশ্রমে খুব ভালো লাভ করা যায়। বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করলে হাজার টাকা লাভ করা যায়।’
পৌর বাস টার্মিনাল এলাকার পিঠা বিক্রেতা আরব আলী। স্ত্রীকে নিয়ে প্রতিদিন সেখানে পিঠা বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘কোনো কাজ-কাম না থাকায় পিঠা বিক্রি শুরু করেছি। পিঠা বিক্রি করে ভালো লাভ করতে পারছি।’
বেশি দাম নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত পিঠা তৈরির জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। তাই অন্য বছরের চেয়ে দাম বেশি নিতে হচ্ছে। এছাড়া গত বছর পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫/৩০ টাকা কেজি। আর এবছর ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ভর্তা করতে প্রতিদিন আধা কেজি পেঁয়াজ লাগছে।’