চুয়াডাঙ্গা শহরের রেলস্টেশন সংলগ্ন রেলগেটটি জেলাবাসীর জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্টেশন-সংলগ্ন রেলগেটটি চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলা থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে যাতায়াতের প্রধান সড়ক।
রেলগেটটি শহরের অভ্যন্তরে হওয়ায় ট্রেন আসা ও চলে যাবার পর রেলগেটের দুইপাশে প্রতিদিন দীর্ঘসময় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। পথচারী ও মোটরসাইকেল চালকরা অতিষ্ট হয়ে অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দণ্ডের নিচ দিয়ে চলাচল করেন।
ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে দিনে রেলগেটটি দিনে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা বন্ধ রাখা হয়। ফলে নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেলগেটের ওপর দিয়ে একটি উড়াল সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, চুয়াডাঙ্গা শহরের মধ্যে প্রায় দুই কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এই পথে প্রতিদিন অন্তত ২২টি যাত্রীবাহী এবং ১২টি মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। যার মধ্যে খুলনা-রাজশাহী, খুলনা-গোয়ালন্দ, খুলনা-ঢাকা ও খুলনা-সৈয়দপুর ও ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং বেনাপোল যাত্রীবাহী ট্রেন রয়েছে। ট্রেন চলাচলে প্রতিদিন অন্তত ২৫ থেকে ৩০ বার শহরের রেলগেটটি বন্ধ করতে হয়। প্রতিবার গড়ে ২০ মিনিট বন্ধ রাখা হয়।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, বর্তমানে অত্যাধুনিক ক্যারিয়ার লকের মাধ্যমে রেলগেট বন্ধ করা হয়। পদ্ধতিগত কারণেই গেট বন্ধ না হলে সিগন্যাল পড়বে না। আর সিগন্যাল না পড়লে নির্দিষ্ট দূরত্বে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকবে। একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পার না হওয়া পর্যন্ত গেটম্যান চাইলেও গেট খুলতে পারবেন না। গেট বন্ধ ও খোলা প্রক্রিয়ায় ১০ মিনিট লেগে যায়। অন্যান্য প্রক্রিয়ায় লাগে আরও ১০ মিনিট। যাত্রীবাহী ট্রেনের পরপরই মালবাহী ট্রেন এলে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট বন্ধ রাখতে হয়।
শহরবাসী বলছেন, রেলগেট বন্ধ হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সড়কের দুইপাশেই তীব্র যানযটের সৃষ্টি হয়। আর সেটি স্বাভাবিক হতে ঘণ্টাখানেক সময় লেগে যায়। এতে নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হন এসব এলাকায় চলাচলকারীরা। বিশেষ করে সকালে অফিসগামী মানুষ ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়ে যান। অনেক সময় মুমূর্ষ রোগীদের নিয়েও বিপাকে পড়ে যান অ্যাম্বুলেন্সের চালকরা।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে রেলগেটের উভয় পাশে বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, ইজিবাইকসহ যানবাহনের দীর্ঘ জট দেখা গেছে। অনেক পথচারী ও মোটরসাইকেল চালককে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেলগেটের দণ্ডের নিচ দিয়ে যাতায়াত করতেও দেখা যায়।
যানজটে আটকে থাকা কলেজ ছাত্রী আদ্রিতা জান্নাত বলেন, প্রতিদিনই রেলগেটে দীর্ঘ সময় আটকে থাকি। ঠিক সময়ে কলেজে পৌঁছাতে বাসা থেকে আগেভাগে বের হই। কিন্তু তবুও দেরি হয়ে যায়।
শামীম এন্টারপ্রাইজের বাসচালক আজিজুর রহমান ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, একবার ট্রেন গেলে ২০-২৫ মিনিট রেলগেটটি বন্ধ থাকে। এরই মধ্যে তীব্র যানজট লেগে যায়। এখান বের হতে অনেক সময় ৪০-৪৫ মিনিট সময় লেগে যায়। অনেক সময় যাত্রীরা অতিষ্ট হয়ে পায়ে হাঁটা শুরু করে। কিন্তু আমাদেরতো সেই সুযোগ নাই।
ট্রাক চালক মতিয়ার বলেন, যে সময়টুকু আমরা রেলগেটে আটকা থাকি। সেই একই সময়ে ঝিনাইদহে পৌঁছে যেতে পারি। দীর্ঘদিনের এই দুর্ভোগ সবার চোখে পড়লেও সমস্যা সমাধানের কোনো পদক্ষেপ দেখছি না।
চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশন মাস্টার মিজানুর রহমান বলেন, ট্রেন চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে এবং মানুষের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থেই রেলগেট বন্ধ রাখতে হয়। সকালের দিকে রেললাইনের উভয়পাশ থেকে ট্রেন আসার কারণে রেলগেট দীর্ঘসময় ফেলে রাখতে হয়। যার ফলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত যানযট থাকে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, যানজটের সমস্যা সমাধানে এখানে একটি উড়াল সেতু অথবা শহর সংলগ্ন একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণ জরুরি। জেলা প্রশাসক যদি মনে করেন এই সমস্যা নিরসন করবেন। তবে তিনি উদ্যোগ নিলেই তা সম্ভব।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেন, চুয়াডাঙ্গা শহরের রেলগেটে যানযট নিরসনে উড়াল সড়ক নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। উড়াল সড়কের নির্মাণ হলে জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের এই যানযট সমস্যা নিরসন হয়ে যাবে।