প্রতিষ্ঠার ৫৮ বছর পর রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি আদর্শ লাইব্রেরিটি মাত্র ১০০ বই নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও একটি লাইব্রেরির যে মূল উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম তা বাস্তবায়িত হয়নি তেমন একটা। লাইব্রেরিটিকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই লাইব্রেরিটি বই ও পাঠক শূন্যতায় ভুগতে থাকে।
কিন্তু আশার কথা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠার এতো বছর পর হলেও পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে লাইব্রেরিটি। রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুল হাকিম ও বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের সহযোগিতায় কয়েকজন যুবকের উদ্যোগে পুনরায় বই পড়া কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
‘আরোগ্যে গমনে হাসপাতাল, মনরোগ দূর করতে গ্রন্থাগার’ এই স্লোগান বুকে ধারণ করে মাত্র ১০০ বই নিয়ে তাদের এই যাত্রা শুরু। এখন প্রতিদিন বিকেলে লাইব্রেরিটি পাঠকদের পদচারণায় মুখরিত হয়। পাঠচক্র চলে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। বই এবং স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকা হাতে নিয়ে তাদের জ্ঞান আহরণ চলে। সেই সঙ্গে চলে সমসাময়িক মুক্ত আলোচনা ও সাহিত্য আড্ডা। তরুণ থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবাই একসঙ্গে যোগ হয় সেই মুক্ত আলোচনা ও সাহিত্য আড্ডায়।
বালিয়াকান্দির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের তথ্য সংরক্ষক এম ইকরামুল হক বার্তা২৪.কমকে জানান, সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মৃত মোজাহার আলী বিশ্বাস নিজ উদ্যোগে ১৯৬১ সালে ইউনিয়ন পরিষদের পাশে লাইব্রেরিটি প্রতিষ্ঠা করেন। যার রেজিস্ট্রেশন নং- ৫১১। ১৯৬১-৬৩ পর্যন্ত কিছু বই সংরক্ষণ করে কার্যক্রম চালাতে থাকেন তিনি। কিন্তু এরপর বিভিন্ন কারণে লাইব্রেরিটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আরেক চেয়ারম্যান মৃত আকতারুল ইসলাম মিয়া ১৯৬৫-৬৮ পর্যন্ত বই পড়ার পাশাপাশি এখানে যাত্রা ও নাটকের শিল্পীদের রিহার্সেল করার সুযোগ করে দেন।
স্বাধীনতা পরবর্তী পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এখানে জনতা ব্যাংক, প্রেসক্লাব, শিল্পকলা, বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর সংগঠনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলে। কিন্তু কেউ লাইব্রেরির প্রকৃত কার্যক্রম পরিচালনা করেনি। তবে বর্তমানে কয়েকজন যুবক বই সংগ্রহ করে লাইব্রেরিটি পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পাঠকদের লাইব্রেরিমুখী করতে প্রতি সপ্তাহে পাঠচক্র, লেখা আহ্বান, ম্যাগাজিন প্রকাশ, মীর মশাররফ হোসেন কর্ণার স্থাপন করা সহ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে জাতীয় দিবসগুলোতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
লাইব্রেরিটি পুনরুজ্জীবিত করার স্বপ্নদ্রষ্টা বারুগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী গ্রন্থাগারিক ও মীর মশাররফ হোসেন সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুন্সী আমীর বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বর্তমানে মোবাইলের প্রতি যেভাবে আসক্তি বেড়েছে তাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে। বই পড়ার প্রতি এখন আর কারো কোনো আগ্রহ নেই। তাই আমরা কয়েক বন্ধু দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা এই লাইব্রেরিটি সচল করার উদ্যোগ গ্রহণ করি।’