ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার চাপাসা ও রাণীশংকৈল উপজেলার কোচল সীমান্তের মাঝামাঝি কুলিক নদীর তীরে পাথরকালী মেলা উপলক্ষে দুই বাংলার হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে এই মেলা। বাংলাদেশ ও ভারতীয় বাসিন্দাদের মধ্যে কিছু সময় কথা বলার সুযোগ করে দেয় ভারতীয় বিএসএফ ও বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।
দুই দেশে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনদের একনজর চোখের দেখা দেখার জন্য হাজারো মানুষ উপস্থিত হন এখানে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর নিজের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পেরে একটু বুকে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছা পোষণ করলেও কাঁটাতারের বেড়ার কারণে উপস্থিত নারী-পুরুষদের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
চোখের পানি ফেলে নিকটজনকে কাছে পাওয়ার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন অনেকে। দীর্ঘদিন দুরে থাকা, দেখা না হওয়ার আবেগে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আবার প্রিয়জনের দেখা না পেয়ে অনেককে চোখের পানি ফেলে বাড়ি ফিরে যেতে হয়।
দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ থেকে আসা রওশন এলাহী জানান, চাচা ভারতে থাকেন দীর্ঘ ১০ বছর ধরে। তার সঙ্গে কোনোদিন দেখা হয়নি। আজ সপরিবারে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।
বগুড়ার গাবতলী থেকে ভাগনের সাথে দেখা করতে এসেছেন রানু পাল। তিনি জানান, অনেকদিন পরেই আজ ভাগনে ও তার পরিবারের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তারা আমাদের বিভিন্ন উপহার দিয়েছে, আমরাও তাদের বাংলাদেশি শাড়ি দিয়েছি।
রানীশংকৈল উপজেলার উত্তর লেহেম্বা থেকে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন নগেন ও তার স্ত্রী। তার মেয়ে ভারতের নকশালবাড়িতে থাকেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন তাদের সাথে দেখা না হওয়ায় তাদের দেখতে এসেছি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাদের সঙ্গে দেখা ও কথা হয়েছে।
মেলা কমিটির সভাপতি নগেন কুমার পাল জানান, প্রতি বছর পাথরকালী মেলার আয়োজন করা হয়। দেশ বিভাগের পূর্বে এ এলাকা ছিল ভারতবর্ষের আওতায়। পরবর্তীতে দেশভাগ হলে এখানে বসবাসরত বাসিন্দাদের অনেকে ভারতের অংশে চলে যায়। আর পাথরকালী পূজা অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবছর ডিসেম্বরের ১ম শুক্রবার। এই একটি দিনে আত্মীয়-স্বজনদের দেখার জন্য এ এলাকার বাসিন্দারা বছরজুড়ে অপেক্ষা করে থাকেন।