খেতাব জোটেনি পুলিশ লাইনের বীর শাহজাহানের

নেত্রকোনা, দেশের খবর

জিয়াউর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নেত্রকোনা | 2023-09-01 01:37:35

২৫ মার্চ রাতে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রথম আক্রমণের সংবাদটি সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়া। এরপর হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দী হয়ে সহ্য করেছেন অকথ্য নির্যাতন। চারদিন বর্বরোচিত নির্যাতন শেষে মুক্তি পেয়ে নিজ এলাকায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন তিনি।

পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে একাধিক সম্মুখ সমরে লড়াই করেছেন শাহজাহান মিয়া। স্বাধীনতার ৪৮ বছর অতিবাহিত হলেও রাষ্ট্রীয় কোনো খেতাব জোটেনি বীর এই মুক্তিযোদ্ধার।

বর্তমানে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের চিরাং বাজারে অবস্থিত নিজ বাসস্থান মুক্তি ভবনে স্ত্রী-সন্তান ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে জীবনের শেষ দিনগুলি কাটাচ্ছেন শাহজাহান মিয়া। একাত্তরের যুদ্ধদিনের স্মৃতি আউড়িয়ে বেড়ান সারাক্ষণ। তার কাছে যেই যান তাকেই শোনান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস।

১৯৪৯ সালের ১ জুলাই নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের বাট্টা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শাহজাহান মিয়া। সৈরত আলী ও আমেনা আক্তারের ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে প্রথম সন্তান তিনি। ১৯৬৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শাহজাহান মিয়া কনস্টেবল পদে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন।

শাহজাহান মিয়ার যুবক বয়সের ও বর্তমান সময়ের ছবি

বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়ার সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে আসে তার যুদ্ধের নানান স্মৃতি। তিনি জানান, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ওয়্যারলেস অপারেটরের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের সংবাদটি সারাদেশে বেতার বার্তার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। শাহজাহান মিয়ার পাঠানো বার্তাটি ছিল এরকম— ‘বেইজ ফর অল স্টেশন্স অব ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ, কিপ লিসেন অ্যান্ড ওয়াচ, উই আর অলরেডি অ্যাটাকড বাই পাক আর্মি। ট্রাই টু সেভ ইয়োরসেল্ভস, ওভার।’

২৫ মার্চ রাতেই পাকিস্তানিদের কাছে আটক হন শাহজাহান মিয়া। পরে তাদের বর্বর নির্যাতনের চিহ্ন শরীরে নিয়ে ৪ দিন পর ২৮ মার্চ মুক্তি পান তিনি। মুক্তি পাওয়ার পর ৩০ মার্চ গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে ৪ দিনে নিজ বাড়িতে পৌঁছান। তারপর কিছুদিন বাড়িতে অবস্থান করে পিতা সৈরত আলী, ছোটভাই এমদাদুল হক বাচ্চু ও নুরুল ইসলাম নুরুকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ভারতে চলে যান। সেখানে প্রশিক্ষণ শেষে ১১ নম্বর সেক্টরে কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়া জানান, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকায় পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নেন তিনি। ৬ ডিসেম্বর দুর্গাপুর থানার বিজয়পুর বিওপি আক্রমণের সময় মাইন বিস্ফোরণে তিনি এবং তার ছোটভাই নুরুল ইসলাম নুরু গুরুতর আহত হন। ভারতে প্রশিক্ষণ চলাকালীন অবস্থায় তার ছোটভাই এমদাদুল হক বাচ্চু মারা যান। তার পিতা নৌকাযোগে বাচ্চুর লাশ নিয়ে গিয়ে গ্রামে সমাহিত করেন বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বীর এই মুক্তিযোদ্ধার দাবি, তাকে রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত করার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে পাঠ্যপুস্তকে যেন রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পাকিস্তানিদের প্রথম আক্রমণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর