ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে অচলাবস্থা। চিকিৎসকের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দীর্ঘ তিন-চার বছর ধরে শূন্য থাকায় রোগীরা এই হাসপাতাল থেকে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিভিন্ন বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন এসএসসিএমও (সাব এসিসটেন্ট কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা)।
চিকিৎসকের অভাবে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত বা জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত রোগী এলেই তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আড়াই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফরিদপুর শহরতলীর হাড়োকান্দিতে অবস্থিত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। ফলে এই হাসপাতালটি ‘রেফার্ড হাসপাতাল’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
১০০ সজ্জা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে কর্মকর্তার পদ রয়েছে ৩৭টি। বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১৭ জন। পদশূন্য রয়েছে ২০টি। অর্থাৎ মোট পদের ৪৬ ভাগ চিকিৎসক বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন। এই হাসপাতালে সিনিয়র ও জুনিয়র কনসালটেন্ট পদ রয়েছে ১২টি। এর মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৬ জন।
গত চার বছর ধরে প্যাথলজির জুনিয়র কনসালটেন্ট, সার্জারির সিনিয়র কনসালটেন্ট ও চক্ষুর জুনিয়র কনসালটেন্ট নেই। দুই বছর ধরে নেই অর্থপেডিক্সের সিনিয়র কনসালটেন্ট। এক বছর ধরে নেই সিনিয়র কনসালটেন্ট চর্ম ও যৌন এবং আট মাস ধরে নেই জুনিয়র কনসালটেন্ট রেডিওলজিস্ট।
এছাড়াও পাঁচ বছর ধরে এনেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ, চার বছর ধরে প্যাথলজিস্ট, তিন বছর ধরে রেডিওলজিস্ট, দুই বছর ধরে সহকারী রেজিস্ট্রার গাইনি ও সার্জারি নেই হাসপাতালটিতে। সহকারী রেজিস্ট্রার মেডিসিন, ব্লাড ব্যাংক কর্মকর্তা নেই তিন বছর ধরে। অপরদিকে আয়ুর্বেদিক বিভাগের মেডিকেল কর্মকর্তা বর্তমানে প্রেষণে ঢাকায় রয়েছেন।
এদিকে, হাসপাতালে রেডিওলজিস্ট না থাকায় এক্সরের প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে না। একই কারণে বন্ধ রয়েছে আলট্রাসনোগ্রাম। প্যাথলজি বিভাগের কাজও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
অপরদিকে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির মোট পদ রয়েছে ১৬টি। সেখানে কর্মরত রয়েছে ৬ জন। এছাড়া সেবা তত্ত্বাবধায়ক ও উপ সেবা তত্ত্বাবধায়ক পদ দুটি শূন্য রয়েছে। চারজন নার্সিং সুপারভাইজার ও ফার্মাসিস্ট থাকার কথা থাকলেও দুই পদে একজন করে কর্মরত আছেন। ফার্মাসিস্ট, অফিস সহায়ক, বাবুর্চি, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও ওয়ার্ড মাস্টারের পদগুলো ৫০ ভাগের বেশি খালি রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গছে ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে পুরুষ সার্জারি, মহিলা সার্জারি, পুরুষ মেডিসিন, মহিলা মেডিসিন, পেয়িং, গাইনি, শিশু ও ডায়রিয়াসহ মোট আটটি ওয়ার্ড রয়েছে। একশ শয্যার এ হাসপাতালে মেঝেসহ মোট ১২০ জন রোগী ভর্তি অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। অথচ দুবছর আগেও এই হাসপাতালেই ২’শ থেকে আড়াইশ রোগী ভর্তি থাকতো সব সময়।
সেবা নিতে আসা বিভিন্ন রোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সকাল ৮টার দিকে চিকিৎসকরা হাসপাতালে এসে আঙুলের ছাপ দিয়ে নিজেদের কাজে বেড়িয়ে পড়েন। দুই একজন চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ডে গেলেও বেশিরভাগ ডাক্তার আড্ডা দিয়ে সময় পার করেন। এ সময় তাদের খোঁজ করা হলে জানানো হয় ‘ডাক্তার জরুরি কাজে বাইরে আছেন।’
এছাড়া নাস্তা বিরতি, দুপুরের খাওয়া বিরতি, নামাজ বিরতি মিলিয়ে দুপুর হতেই ডাক্তাররা আঙুলের ছাপ দিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন এনামুল হক জানান, হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সংকট চলছে। পাশাপাশি রেডিওলজিস্ট, প্যাথোলজিস্ট ও এনেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ না থাকায় চিকিৎসার পাশাপাশি অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতিমাসেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদা পত্র পাঠানো হচ্ছে কিন্তু কোনো সুফল পাচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি বেশ কিছু চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আশাকরি আমরা আমাদের সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব।’
ডাক্তারদের অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি সবসময় চেষ্টা করি তাদের নিয়মের মধ্যে রাখতে। তবে বিভিন্ন কারণে তারা প্রতিনিয়ত শৃঙ্খলাভঙ্গ করছে। চিকিৎসক না থাকায় অনেক সময় অনেক কিছুই তাদের বলা সম্ভব হয় না।
সিভিল সার্জন বলেন, শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী এ হাসপাতালটিকে সচল করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে। এ ব্যাপারে তিনি সব মহলের সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করেন।