পায়রা সমুদ্র বন্দর চালু হওয়ায় চার বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কাস্টম হাউজ নির্মাণ করার জন্য জমি বরাদ্দ পায়নি কাস্টম কর্তৃপক্ষ। যার ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারীদের।
পূর্ণাঙ্গ কাস্টম হাউজ স্থাপনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠালেও ভূমি মন্ত্রণালয় অনুমোদন না দেওয়ায় জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হয়নি বলে দাবি কাস্টম হাউজ কর্তৃপক্ষের। ফলে আগামী বছর গুলোতে যখন পুরোদমে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং পায়রা বন্দর চালু হবে তখন বন্দর ব্যবহারকারীদের ভোগান্তির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা।
২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা বন্দরের ফলক উন্মোচন করেন। এর ঠিক আড়াই বছর পর ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পায়রা বন্দরের অপারেশন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। ২০১৬ সালে পায়রা সমুদ্র বন্দরের অপারেশন কার্যক্রম শুরু হওয়ার সাথে সাথে কাস্টম হাউজ কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমও শুরু হয়। সেই থেকে এ বছরের নভেম্বর পর্যন্ত পায়রা বন্দরে মোট ৪৩টি বিদেশী জাহাজ পণ্য নিয়ে এসেছে। এসব জাহাজ বহির্নোঙরে পণ্য খালাস সম্পন্ন করে। এ থেকে কাস্টম হাউজ ১৩৩ কোটি ২৮ লক্ষ ৯৫ হাজার ৯১২ টাকা রাজস্ব আয় করে। তবে ২০১৬ সালে পায়রা কাস্টম হাউজের জন্য জমির বরাদ্দ চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিলেও এখন পর্যন্ত ভূমি মন্ত্রণালয় জমির অনুমোদন দেয়নি।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, এ বছরের শেষ দিকে কিংবা জানুয়ারির প্রথম দিকে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ম ইউনিট ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন শুরু হলে কয়লা নিয়ে বিদেশি জাহাজের আগমন বাড়বে কয়েক গুণ। তবে বন্দর ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় পায়রা কাস্টম হাউজের নিজস্ব কোনো অফিস নেই। বর্তমানে পটুয়াখালী শহরের পিডিএস মাঠ এলাকার একটি ভাড়া বাসায় পায়রা কাস্টম হাউজের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ফলে সিএন্ডএফ এজেন্ট ও শিপিং এজেন্টসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের ভোগান্তিতে পড়ছে।
অপরদিকে কাস্টম হাউজের কার্যক্রম পটুয়াখালী জেলা শহরে থাকলেও ব্যাংকিং কার্যক্রম বিশেষ করে রাজস্ব জমা দিতে ৫০ কিলোমিটার দূরে কলাপাড়া উপজেলায় যেতে হয়। ফলে বাড়ছে ভোগান্তি।
পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্স সভাপতি মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘একই ছাদের নিচে কাস্টম হাউজ এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করতে পারলে পায়রা বন্দর ব্যবহারে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়তো।’ পাশপাশি চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দরের মত অনলাইনে কাস্টমের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করার সুযোগ তৈরি করার দাবি করেন তিনি।
পায়রা কাস্টম হাউজের সহকারী কমিশনার হাবিবুর রহমান জানান, একটি পূর্ণাঙ্গ কাস্টম হাউজের জন্য দাপ্তরিক কার্যালয়, কর্মকর্তা কর্মচারীদের আবাসিক এলাকা, গোডাউন, ল্যাবরেটরিসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কাস্টম হাউজ কর্তৃপক্ষ ৪০ একর জমির বরাদ্দ চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলেও চার বছরেও জমি বরাদ্দের অনুমোদন মেলেনি। আর অস্থায়ী ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে স্থান চেয়েও পাওয়া যায়নি। ফলে বাধ্য হয়ে জেলা শহরের একটি ভবনের দুটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
২০২১ সাল নাগাত পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে পায়রা সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম শুরু করতে বন্দরসহ বিভিন্ন সংস্থা কার্যক্রম চালমান রয়েছে। তবে বন্দরের সাথে সম্পৃক্ত কাস্টম হাউজ কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত জমি বরাদ্দ না পাওয়ার বিষয়টিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।