প্রতি বছর দেশে মোট রসুনের চাহিদার একটি বড় অংশ সরবরাহ করা হয় নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা থেকে। এছাড়া আমন ধানের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ফুলকপি, পাতা কপি, পেঁয়াজ ও সরিষার আবাদ হয়।
তবে নাটোরের এই গুরুদাসপুর উপজেলার শীতকালীন সবজি, রাস্তাঘাট আর পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ইটভাটাগুলো। এক ফসলি থেকে শুরু করে তিন ফসলি কৃষি জমিতেও ইটভাটা গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে দিনদিন কমে যাচ্ছে আবাদি জমির পরিমাণ। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে ফসলের উৎপাদন।
গুরুদাসপুর উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, উপজেলায় মোট ইটভাটার সংখ্যা ১৩টি। এর মধ্যে গুরুদাসপুর পৌর এলাকায় ইটভাটা রয়েছে ৭টি। ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থিত বাকি ৬টি ইটভাটাও পৌরসভার আবাসিক এলাকার কাছে অবস্থিত।
অপরদিকে, উপজেলা কৃষি অফিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিটি ইটভাটা গড়ে ৩০ বিঘা করে মোট ৩ শতাধিক বিঘা কৃষি জমি দখল করেছে। এসব জমিতে রোপা, আমন, আউশ ও রবি ফসলের আবাদ হতো।
বর্তমানে ইটভাটার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শীতকালীন সবজির ক্ষেতগুলো। বিশেষ করে গুরুদাসপুর পৌর এলাকার তাড়াশিয়া পাড়া ও উপজেলার চিতলাপাড়া গ্রামের ফুলকপি, বাঁধাকপি ও সরিষার আবাদ হুমকিতে পড়েছে। ইটভাটার ধোঁয়া পার্শ্ববর্তী জমিতে ছড়িয়ে পড়ে ফুলকপি ও সরিষার ফুল এবং বাঁধাকপির পাতা প্রতিনিয়ত কালচে বর্ণ ধারণ করছে। বিবর্ণ এসব সবজি বাজারে বিক্রি করে দাম পাচ্ছে না কৃষক।
সলিম উদ্দীন নামে এক কৃষক জানান, ইটভাটার কারণে আগের মতো সবজি উৎপাদন হয় না। পাশাপাশি কীটনাশক সমস্যা আছে।
আক্কাস আলী নামের আরেক কৃষক জানান, স্থানীয় কৃষকরা ভালো দামের আশায় মৌসুমের শুরুতে আগাম সবজি চাষ করে। কিন্তু ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে সবজি নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে বাজারে সবজির দাম পাওয়া যায় না।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল করিম জানান, দিন দিন গুরুদাসপুরে ফসলের আবাদ কমে যাচ্ছে। ইটভাটাগুলো আবাসিক এলাকায় স্থাপিত হওয়ায় কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি জমির উর্বর শক্তিও কমে যাচ্ছে। গত বছর ২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কপির চাষ হলেও এবার আবাদ হয়েছে ১৮ হেক্টর জমিতে। এছাড়া রসুন ও সরিষার আবাদও কমছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তমাল হোসেন জানান, রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত না করে চলাসহ পরিবেশ ও ফসল রক্ষায় বেশ কয়েকটি বিষয়ে ইটভাটা মালিকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নিয়ম না মানায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ইটভাটাকে জরিমানাও করা হয়েছে। ফসল, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাটের স্বার্থে ভবিষ্যতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।