তেঁতুলিয়া থেকে ফিরে: মহানন্দা বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। সর্পিলাকার এই নদীটি ভারতের দার্জিলিং থেকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশ হয়ে বাংলাদেশের সর্বোত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ায় প্রবেশ করেছে। এই মহানন্দাকে বালি আর পাথুরে নদীও বলা হয়। এই নদীতে ভেসে আসা নুড়ি পাথর সংগ্রহ করে সংসার চলে বহু হতদরিদ্র মানুষের। তেঁতুলিয়ার অধিকাংশ শ্রমিকের প্রধান জীবিকা এই পাথর।
মহানন্দার তীরে ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত পাথর তোলে শ্রমিকরা। সেই পাথর বিক্রি করে সচল হয় তাদের সংসারের চাকা। এই পাথর ঘিরেই তাদের জীবন।
তেঁতুলিয়ায় মহানন্দা ঘুরে দেখা গেছে, বছরের প্রতিদিনই চলে শ্রমিকদের পাথর সংগ্রহের কাজ। তাই প্রতিদিন সকালেই সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে বেড়িয়ে পড়েন শ্রমিকরা। ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীত উপেক্ষা করে মহানন্দা নদীতে পাথর কুড়ান তারা। বাতাসে ফুলানো ট্রাকের চাকার টিউব, লোহার চালানি নিয়ে কোথাও এক বুক, কোথাও বা হাঁটু পানির নিচ থেকে শ্রমিকেরা এই নুড়ি পাথর সংগ্রহ করছেন। পাথর কুড়ানোর ফাঁকে দুপুরের খাবার মহানন্দা নদীর তীরেই খেয়ে নেন শ্রমিকরা। মাঝে মহানন্দায় ডুব দিয়ে গোসলটাও সেরে নেন।
দিন শেষে সংগ্রহ করা পাথর বিক্রি করেন স্থানীয় পাথর ব্যবসায়ীদের কাছে। প্রতি নৌকা পাথর বিক্রি হয় এক হাজার ২০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা দরে। যারা পাথর কুড়ান তাদের দৈনিক আয় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। এ টাকা দিয়েই সংসার চলে শ্রমিকদের। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনাসহ আনুষঙ্গিক খরচ।
পাথর শ্রমিক লোকমান হোসেন বার্তা২৪.কম-কে জানান, শীতের ভয় করলে কি জীবন চলে। প্রতিদিনই আমাদের পাথর সংগ্রহ করতে হয়। কারণ সংসার তো চালাতে হবে। তবে জানান, অনেক কষ্ঠ করলেও মহাজনেরা পাথরের সঠিক দাম দেয় না। এই শীতে যদি কেউ অসুস্থ হয় সেদিনে আমাদের না খেয়ে চলতে হয়।
সর্দারপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী সোবাহান মিয়া ও আবু বক্কর বার্তা২৪.কম-কে জানান, প্রতিদিন মহানন্দায় শ্রমিকেরা পাথর সংগ্রহ করে। আর সেই পাথর আমরা তাদের কাছ থেকে কিনে নেই। ওই পাথর দেশের বিভিন্নস্থানে চলে যায়।
তেঁতুলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, মহানন্দা এই এলাকার হাজার হাজার মানুষের জীবিকার সন্ধান দিয়েছে । শ্রমিকরা জীবিকার সন্ধানে প্রচন্ড শীতে মহানন্দা নদীতে কাজ করে। ভারত যদি কখনো এই নদী থেকে পাথর উত্তোলনের নিষেধাজ্ঞা দেয় তবে এই পাথর শ্রমিকদের জীবনে বিপর্যয় হয়ে পড়বে ।