কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অরক্ষিত রেলক্রসিং এর কারণে প্রতিনিয়তই বাড়ছে দুর্ঘটনা। এসব রেলক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান নেই, তেমনি রাখা হয়নি কোনো নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। ফলে উন্মুক্ত রেলগেট দিয়ে যানবাহন এবং পথচারীদের চলাচল করতে গিয়ে প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। যার ফলে ঘটছে প্রাণহানি।
১৮৬৭ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকার দর্শনা হতে জগতি পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে সংস্কার করা হয় এই রেললাইন। পোড়াদহ থেকে রেলযোগে রাজশাহী, ঢাকা, রাজবাড়ী, খুলনা ইত্যাদি স্থানে যাওয়া আসা শুরু হয়। ১৮৯৭ সালে দর্শনা–পোড়াদহ সেকশনটি সিঙ্গেল লাইন থেকে ডাবল লাইনে উন্নীত করা হয়। পর্যায়ক্রমে ১৯০৯ সালে পোড়াদহ–ভেড়ামারা, ১৯১৫ সালে ভেড়ামারা–ঈশ্বরদী এবং ১৯৩২ সালে ঈশ্বরদী–আব্দুলপুর সেকশনগুলোকে ডাবল লাইনে উন্নীত করা হয়।
প্রতিদিন ৪০টির বেশি ট্রেন যাতায়াত করে পোড়াদহ জংশন দিয়ে। কিন্তু মান্ধাতার আমলের রেললাইনের কারণে মাঝে মধ্যেই দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে খুলনা থেকে রাজশাহীগামী কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস কাটদহচর রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় বালুবোঝাই একটি শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ট্রলি রেলক্রসিংয়ে উঠে পড়ে। এ সময় ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই ট্রলির চালক ও হেলপার মারা যান।
এলাকাবাসীর অভিযোগ মিরপুর উপজেলার কাটদহচর এলাকার মাঝখান দিয়ে রেললাইন গেছে। রেলগেটের ওপর দিয়ে আঞ্চলিক সড়ক থাকায় প্রতিনিয়ত স্থানীয়রা যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু কোন রেলগেট এবং গেটম্যান না থাকায় এমন দুর্ঘটনায় পড়তে হয় মাঝে মধ্যেই। গতবছরও ট্রেন দুর্ঘটনায় কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। শিগগিরই রেলগেট দেওয়ার দাবি জানান তারা।
কাটদহচর এলাকার আতিকুর রহমান লালন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এসব রেলগেটে গেটম্যানের ব্যবস্থা না থাকায় তাদের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পারাপার হতে হচ্ছে। এ বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়।
পোড়াদহ রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার শরিফুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, কুষ্টিয়ায় প্রায় ৪২ কিলোমিটার রেলপথ আছে। এসবের মধ্যে অন্তত ১০টি অরক্ষিত রেলগেট রয়েছে। লোকবলের অভাবে সেসব স্থানে কোন রেলগেট এবং গেটম্যান নেই। তাছাড়া রেলের অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন স্থানে পাকা সড়ক নির্মাণ করে। এসব স্থানে সড়ক নির্মাণের আগে রেল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগোযাগ করলে হয়তো রেলগেট এবং গেটম্যান দেওয়া হতো।
তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার কাটদহচর এলাকায় দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হওয়ার পর রেল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি জানতে পেরেছি সেখানে শিগগিরই রেলগেট নির্মাণ করা হবে। এজন্য গুমটি ঘর (গেটম্যান বাসস্থান) করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।