সরিষা ফুলে ঢেকে গেছে মাদারীপুরের ফসলের মাঠ। যতদূর চোখ যায় সবুজ মাঠে হলুদের হাতছানি। পথিকের নজর কাড়তে এর সৌন্দর্য বাড়িয়েছে মৌমাছির দল। সেই সঙ্গে সরিষা ক্ষেতে বসেছে বুলবুলি ও শালিকের ঝাঁক।
চলতি রবি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ সরিষার আবাদ হয়েছে এ জেলায়। মৌসুমি সরিষা চাষ লাভজনক হওয়ায় আবাদে মনোযোগ দিয়েছে জেলার শিবচর ও কালকিনি উপজেলার কৃষকরা। এছাড়াও কয়েকদিন আগে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা কম পুঁজিতে বেশি ফলন পাওয়ার আশায় সরিষা চাষ করেছেন।
জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর জেলায় ১৪ হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে। জেলার কৃষকরা স্থানীয় জাতের পাশাপাশি বারি সরিষা- ৪, ৯, ১৪ ও ১৫, বিনা-৪ ও ১১,টরি-৭, এসএম-৭৫ সরিষার আবাদ করে লাভের মুখ দেখছেন।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে মাঠে চাষ করা হয়েছে বিভিন্ন জাতের সরিষা। শিবচর উপজেলার উল্লেখযোগ্য বাশকান্দি, ভান্ডারীকান্দি, বহেরাতলা, উমেদপুর, ভদ্রাশন, পাচ্চর, বন্দরখোলা, কুতুবপুর, কাদিরপুর, দ্বিতীয়খন্ড ইউনিয়নসহ কালকিনি উপজেলার চকরিয়া, বাসগাড়ি ও সাহেবরামপুর এলাকায় সরিষা চাষ করা হয়েছে। ফসলের মাঠের শোভাও বাড়িয়ে তুলেছে সরিষা ক্ষেত। মাঠের চারিদিক যেন হলুদে হলুদে পরিপূর্ণ। এক দেখাতেই মন কাড়বে পথচারীদের। মাঠে মাঠে শুধু যেনো হলুদের সমারোহ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক।
শিবচর উপজেলার বাশকান্দি এলাকার কৃষক খবির মল্লিক বলেন, কয়েকদিন আগের ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ৪ বিঘা জমিতে আগাম জাতের সরিষার চাষ করেছি। গত কয়েক বছর ধরেই ধান চাষে তেমন লাভ হয় না। আর এ কারণেই প্রতি বছরই লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাই বিকল্প ফসল হিসেবে অন্য ফসলের পাশাপাশি সরিষা চাষের প্রতি আগ্রহী হয়েছে কৃষক।
একই উপজেলার বড়দোয়ালী গ্রামের কৃষক মনির মোল্লা বলেন, চলতি মৌসুমে সার, বীজ, কীটনাশক সরবরাহের পাশাপাশি প্রায় দুই বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। সরিষা ফলন ভালো হয়েছে। ফুলও এসেছে। এখন ভালো ফলন আশা করছি। এরপর সরিষা তুলে নিয়ে ওই জমিতে বোরো ধান লাগাবেন বলেও জানান তিনি।
মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জিএমএ গফুর জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষার আবাদ থেকে কৃষকরা বাড়তি মুনাফা আয় করতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি। এছাড়া চলতি বছর বিঘা প্রতি সরিষার পরিমাণ ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ থেকে ৬ মণ।