রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ঐতিহাসিক দেবী চৌধুরাণীর পুকুর ময়লা-আবর্জনায় ভরা। এই পুকুরে প্রতিদিন পশু জবাই করে রক্ত, নাড়িভুঁড়ি ও উচ্ছিষ্ট ফেলা হচ্ছে। এছাড়াও বাজারের আশ পাশের বসত বাড়ির ময়লা-আবর্জনাও ফেলা হচ্ছে পুকুরের পানিতে। এর ফলে দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পীরগাছা উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নের চৌধুরাণী হাটে (বাজারে) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ঐতিহাসিক ‘দেবী চৌধুরাণী’ উপন্যাসের নায়িকা ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রদূত জয়দুর্গা দেবী চৌধুরাণী তৎকালীন সময়ে এলাকার মানুষের পানীয় জলের অভাব দূরীকরণে প্রায় ১৫ একর জমিতে একটি পুকুর খনন করেন।
কথিত রয়েছে ওই পুকুরে এক সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা পার্বণের জন্য সোনার চালুনি ও বাতি ভেসে উঠতো। পুকুরের আশেপাশে জনবসতি গড়ে উঠলেও পুকুরের পাড় ঘেঁষে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার দেবী চৌধুরাণীর হাট বসে। এখান থেকে সরকার প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করছে।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পশুর বর্জ্যসহ ময়লা-আবর্জনা পুকুরের পানিতে ফেলা হচ্ছে। এছাড়া বসতবাড়ির পায়খানার পাইপ লাইন পুকুরের সঙ্গে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ওই পুকুরের দূষিত পানিতে হাটের শাক-সবজি পরিষ্কারসহ বিভিন্ন কাজে পানি ব্যবহার করা হচ্ছে।
চৌধুরাণীর হাটে আসা ক্রেতা আফছার আলী, কাঁচামাল ব্যবসায়ী শের আলম ও আনোয়ার হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘পশুর বর্জ্যসহ হাটের ময়লা-আবর্জনা পুকুরের পানিতে ফেলায় দুর্গন্ধে হাটে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে। পুকুরে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় ভরাট হয়ে পুকুরের আয়তন ছোট হয়ে আসছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাফিজার রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, আগে মুসল্লিসহ পার্শ্ববর্তী লোকজন পুকুরের পানিতে অজু ও গোসল করতো। বর্তমানে পুকুরের পানিতে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় তা হয়ে পড়েছে ব্যবহার অনুপযোগী।
দেবী চোধুরাণী কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দেবী চৌধুরাণী পুকুরে পশুর বর্জ্য, ময়লা-আবর্জনা ফেলে পানি দূষিত করলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। নদী ও পুকুরের পানিতে বর্জ্য ফেলা পরিবেশ আইনে নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবু আল হাজ্জাজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দূষিত পানি ব্যবহার ও বর্জ্যের দুর্গন্ধে মানুষের পেটের পীড়া, চর্ম রোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই পুকুরের পানি পরিষ্কার রাখা উচিত।’
কৈকুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মন্ডল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে দূষণ রোধে উদ্যোগ নেওয়া হলেও বন্ধ করা যায়নি। দেবী চৌধুরাণীর স্মৃতি সংরক্ষণে পুকুরটি দূষণের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে।’
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমীন প্রধান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ঐতিহাসিক পুকুরটি দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’