মেহেরপুর জেলার মাঠগুলোতে এখন সবুজের সমারোহ। বিশেষ করে ক্ষেতের পর ক্ষেত দুলছে গমের কচি পাতা। গমের কদর আর ধান চাষে লোকসানের বিষয়টি চাষিদের সিদ্ধান্ত বদল করছে। অপরদিকে ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাতের গম আবাদে এক নতুন স্বপ্ন দেখছেন জেলার কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, গেল মৌসুমের চেয়ে ৩ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমি চাষ বৃদ্ধি পেয়ে এবার গম আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। যা চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর বেশি।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গেল বছরের বোরো মৌসুমের ধান ঘরে ওঠার পর থেকেই ধানের দর পতন শুরু হয়েছে। সদ্য ওঠা আমন ধান মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬২০ টাকা দরে। এমন দর সামনে নিয়ে বোরো ধান আবাদের ঝুঁকি নিতে চাননি অনেক কৃষক। অপরদিকে বর্তমান
বাজারে প্রতি মণ গম ১ হাজার টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। এতে গম আবাদের দিকে চাষিদের ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এখন গম ক্ষেতের সেচ, সার প্রয়োগ ও আগাছা পরিষ্কারসহ প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করা হচ্ছে। আগাম ক্ষেতে গমের শীষ বের হওয়া শুরু হয়েছে।
শিবপুর গ্রামের কৃষক আলাল হোসেন বলেন, ‘ধান উৎপাদনের চেয়ে গম উৎপাদন খরচ অনেক কম। আবার গমে লাভও বেশি।’
আমঝুপি গ্রামের চাষি জাহিদুজ্জামান বলেন, ‘এক সময় রুটির পরিচিতি ছিল গরিবের খাবার হিসেবে। এখন সব শ্রেণির মানুষ রুটি খেতে পছন্দ করে। তাই ধানের পাশাপাশি গম উৎপাদন করা চাষিদের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।’
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে মেহেরপুর জেলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেরর আটটি জেলায় গমে ব্লাস্ট নামক ভয়ঙ্কর ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দেয়। এতে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ অঞ্চলে গম আবাদের মারাত্মক বাধাগ্রস্ত হয়। তবে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) বারি গম ৩৩ ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন করে। এর মধ্যে ব্লাস্ট প্রতিরোধে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
২০১৮ সালে মেহেরপুর জেলায় স্বল্প পরিমাণ জমিতে বারি গম ৩৩ আবাদ হয়। ব্লাস্ট প্রতিরোধে জাতটি সক্ষম হওয়ায় চাষিরা নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলায় বারি গম ৩৩, বারি গম ৩০, বারি গম ৩২, বারি গম ২৮ ও বারি গম ২৪ (প্রদীপ) আবাদ হয়েছে।
রাইপুর গ্রামের চাষি মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘ব্লাস্ট নিয়ে চরম ভীতির মধ্যে ছিলাম। এবার ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত বারি গম ৩৩ আবাদ করেছি। আগামী বছর এ জাতের গম আরও বেশি জমিতে আবাদ করব।’
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানি পর্যায়ে বারি গম ৩৩ বীজ চাষিদের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। এতে অনেকেই এবার ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাতের গম আবাদ করেছেন। এছাড়া গম আবাদ বেশ লাভজনক। আশা করছি আগামী বছর গমের আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে।’