ফরিদপুরে সরিষা, কালো জিরাসহ বিভিন্ন ক্ষেতে বাক্স দিয়ে মধু আরোহণ করে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা।
শীতের শুরু অর্থাৎ অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে ফাল্গুন মাসে লিচুর ফুল থাকা সময় পর্যন্ত গড়ে চার মাস বাক্স পদ্ধতিতে মধু আরোহণ করে থাকেন কৃষকরা। জমিতে যখন সরিষার হলুদ রঙের ফুলে ভরে যায়, তখন কৃষকরা ওই ক্ষেতের মধ্যে কিংবা ক্ষেতের কাছাকাছি কোনো ফাঁকা জায়গায় বাক্স পদ্ধতিতে মধু আরোহণ করেন।
ফরিদপুর সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের খলিল মণ্ডলের হাটের কাছে তালতলা গ্রামে বাক্স পদ্ধতিতে মধু আরোহণ করছেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের মোড় এলাকার বাসিন্দা মোক্তার মণ্ডল (৪৫) ও তার ছেলে আরমান মণ্ডল (১৮)।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) তালতলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গোয়ালন্দ-তাড়াইল সড়কের তালতলা এলাকা থেকে উত্তরে খলিল মণ্ডলের হাটের দিকে চলে গেছে একটি পাকা সড়ক। ওই পাকা সড়ক দিয়ে কিছুটা পথ এগোতেই পূর্বপাশে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী চাঁন মিয়ার ফাঁকা ক্ষেতের আনুমানিক ছয় শতাংশ জমিতে বাক্স পদ্ধতিতে মধু আরোহণ করছেন আরমান মণ্ডল।
প্রায় ১শটি বাক্স দিয়ে মধু আরোহণ করছেন তিনি। পাশেই মশারি ঘেরা অবস্থায় রাখা চাক থেকে মধু নিংড়ে নেয়ার মেশিন। সেখান থেকেই পাইকারি ও খুচরা মূল্যে মধু বিক্রি করছেন তিনি। এক কেজি মধুর পাইকারি মূল্য সাড়ে ৩শ টাকা, খুচরা মূল্য ৪শ টাকা।
আরমান জানান, গত পাঁচ বছর ধরে এ পদ্ধতিতে মধু আরোহণ করছেন তিনি। তার বাবা মোক্তার মণ্ডল গত ১৬ বছর ধরে এ কাজের সঙ্গে যুক্ত।
আরমান মধু আরোহণের পদ্ধতি সম্পর্কে জানান, বাক্সগুলো ২০ ইঞ্চি লম্বা এবং ১৬ ইঞ্চি প্রস্থ বিশিষ্ট। একেকটি বাক্সের মধ্যে ১০টি করে ফ্রেম থাকে। একটি ফ্রেমে ৫৬০০টি ছিদ্র বা খোপ থাকে। একটি বিশেষ পদ্ধতিতে রাণী মৌমাছি তৈরি করা হয়। একটি সবল রাণী প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ২০০০ পর্যন্ত ডিম পাড়ে। ওই ডিম থেকে ২০-২২ দিনের মধ্যে বাচ্চা বের হয়। বাচ্চা হওয়ার পর ৪-৫ দিনের মধ্যে ফুলে ফুলে ঘুরে মধু আরোহণ করে মৌমাছি। সে মধু জমা হয় ওই বাক্সের ফ্রেমে। পরে ফ্রেম থেকে মধু আরোহণ করা হয়। একটি বাক্স থেকে সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়। স্বাভাবিক মধুর চেয়ে চাষের মধুর মান ভালো বলে দাবিও করেন তিনি।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্ত্তী জানান, গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর থেকে ‘ডাল তেল মসলা ফসলের বীজ উৎপাদন সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের অধীনে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে বাক্স পদ্ধতিতে মৌচাষ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে ফরিদপুরের প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে একজন কৃষককে এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পাশাপাশি বিনামূল্যে তাদের মধ্যে উন্নতমানের পোশাক, বাক্স ও যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হয়।
তিনি আরও জানান, গত অর্থবছরে ফরিদপুরে ১৩০ জন কৃষক ১৩ মেট্রিক টন মধু উৎপাদন করেছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ৮০ কেজি মধু উৎপাদন হয়েছে। মধুর চাষ বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগ প্রণোদনা দিচ্ছে।