সিংগাইরে অবাধে চলছে নম্বর বিহীন ট্র্যাফে ট্রাক্টর

মানিকগঞ্জ, দেশের খবর

খন্দকার সুজন হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মানিকগঞ্জ | 2023-09-01 14:45:15

রাজধানীর পাশের জেলা মানিকগঞ্জে বৈধ-অবৈধ মিলে ইটভাটার সংখ্যা প্রায় দেড়শ’। যার প্রায় একশ’টি রয়েছে সিংগাইর উপজেলায়। রাজধানী ঘেঁষা এ উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে ইটভাটার সংখ্যা। এসব ভাটায় ইট ও মাটি আনা-নেওয়ায় অবাধে চলছে নম্বর বিহীন ট্র্যাফে ট্রাক্টর।

রেজিস্ট্রেশন না থাকায় এসব ট্র্যাফে ট্রাক্টরের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। অধিকাংশ ট্র্যাফে ট্রাক্টরের চালক শিশু ও কিশোরেরা। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় নেই তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্সও। ফলে যত্রতত্র ঘটছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। ইটভাটা মালিক সমিতির নেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী, এসব নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।

মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রশাসন এসব বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিলেও স্থানীয় চেয়ারম্যানদের হস্তক্ষেপে দেখা মিলছে না স্থায়ী সমাধানের। ট্র্যাফে ট্রাক্টরগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সচেতন হওয়ার আহ্বান উপজেলা প্রশাসনের।

মানিকগঞ্জ-সিংগাইর-হেমায়েতপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে নিয়মিত বাস চালান আমজাদ হোসেন। তিনি জানান, এসব ট্রাক্টর মাটিবোঝাই করে আশেপাশের বিভিন্ন সংযোগ রাস্তা থেকে দানবের মতো মহাসড়কে ওঠে। ধুলাবালুতে ভরে যায় পুরো মহাসড়ক। এসব ট্রাক্টরের অধিকাংশ চালকের বয়স ১৫ বছরের নিচে। যে কারণে যত্রতত্র দুর্ঘটনা ঘটছে বলেও জানান তিনি।

সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দা জানান, রাত ৩টা থেকে সারাদিন গ্রামের কাঁচা ও আধাপাকা রাস্তাগুলো এসব ট্রাক্টরের দখলে থাকে। বিভিন্ন জায়গায় থেকে মাটি আনা-নেওয়া করতে মানুষের কৃষি জমির ওপর দিয়ে রাস্তা বানিয়ে অবাধে চলছে এসব ট্রাক্টর। চলাচলে বাধা দিলে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন মাটি ব্যবসায়ীরা। আর কৃষি জমিতে রাস্তা নেওয়া বাবদ গ্রাম্য মাতব্বরদের মাধ্যমে অল্প কিছু টাকা ধরিয়ে দেন জমি মালিকদের। অনেকের ভাগ্যে তাও জোটে না বলে মন্তব্য গ্রামবাসীদের।

সিংগাইরের বেশিরভাগ ট্র্যাফে ট্রাক্টর চালায় কিশোরেরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্র্যাফে ট্রাক্টর চালক জানায়, এ মৌসুমে ট্রাক্টর চালালে ভালো ইনকাম। বয়স হয়নি বলে লাইসেন্স করতে পারেনি সে। ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ গাড়ি আটকালে ঝামেলা সামলায় মহাজন। চালকের কোনো ঝামেলা নেই।

সিংগাইর ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস বার্তা২৪.কমকে জানান, সিংগাইরে প্রায় একশ’ ইটভাটা থাকলেও ৮০ থেকে ৮৫টি ভাটা চালু রয়েছে। ট্র্যাফে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি আনা-নেওয়ার ব্যবসার সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িত। সুতরাং আমরা এ ট্রাক্টর চালালে সমস্যা করার কেউ নেই।

সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহেলা রহমত উল্লাহ বার্তা২৪.কমকে জানান, ট্র্যাফে ট্রাক্টর চলাচলের বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযান চালিয়ে চালকসহ ট্রাক্টরগুলো আটক করা হয়। কিন্তু স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সুপারিশের কারণে সেগুলো ছেড়ে দিতে হয়। ট্রাক্ট্রর চালকরাও অপ্রাপ্তবয়স্ক। এসব ট্রাক্টর বন্ধ করতে হলে অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট বাড়ানোসহ স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সহাযোগিতা প্রয়োজন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর