পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে সামাজিক অস্থিরতার পাশাপাশি বেড়েছে অস্বাভাবিক মৃত্যুর হার। বিগত ২০১৯ সালে রাঙামাটি জেলায় অপমৃত্যু ও সন্ত্রাসী হামলায় শতাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
এর মধ্যে ৮৮ জনের ময়নাতদন্ত হয়েছে। রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে জানুয়ারিতে ৩ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৬ জন, মার্চে ৭ জন, এপ্রিলে ৫ জন, মে মাসে ১০ জন, জুনে ১৫ জন, জুলাইতে ৮ জন, আগষ্টে ৬ জন, সেপ্টেম্বরে ৯ জন, অক্টোবরে ১০ জন, নভেম্বরে ১০ জন ও ডিসেম্বরে ৫ জনসহ সর্বমোট ৮৮ মরদেহের ময়নাতদন্ত রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল মর্গে করা হয়েছে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ শওকত আকবর খান এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, জেনারেল হাসপাতালের মর্গে গত এক বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ময়নাতদন্ত হওয়া মরদেহের মধ্যে অন্তত ৩২ জন আত্মহত্যা করেছে যাদের বেশিরভাগ টিনেজার।
সম্প্রতি রাঙামাটি শহরের মানিকছড়ি এলাকায় মোবাইল ফোনে প্রেমিকের সঙ্গে সামান্য কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে এক কিশোরী আত্মহত্যা করে। জানা গেছে, ২০১৯ সালে রাঙামাটিতে কমপক্ষে ৪০ জন কিশোর-কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। যাদের অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আত্মহত্যার আগে পোস্ট দিয়েছেন।
রাঙামাটির সাবেক নারী সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ মহিলা সংস্থা রাঙামাটির চেয়ারম্যান ফিরোজা বেগম চিনু বলেছেন, আমি মনে করি পারিবারিক ও সামাজিক অবহেলা, পারিবারিক সহিংসতা এবং যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা। অপরিণত বয়সে প্রেম এবং আত্মপীড়নের কারণেও তারা বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। অভিমান, আবেগ, নিঃসঙ্গতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা শেয়ার করতে না পেরে নিজেকেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় অনেক কিশোর-কিশোরী, যা মোটেও কাম্য নয়।
এদিকে অধিকাংশ ময়নাতদন্ত করা রাঙামাটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ শওকত আকবর খান বলেছেন, বর্তমান সময়ে তথ্য প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহারে আমাদের ছেলেমেয়েদের মাঝে মানবিক মূল্যবোধ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে তাদের নিজস্ব চিন্তা-চেতনায় বেড়েছে নিষ্ঠুরতার আধিপত্য।
তিনি বলেন, পরিবারের সদস্য এবং স্বজনদের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব একটি বিষয়। সাইবার জগতের প্রতি বেশিমাত্রায় ঝুঁকে পড়ার কারণে কাছের মানুষটিও তাদের কাছে গৌণ বিষয় হয়ে যায়। ফলে পারিবারিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি কিংবা পরিবারের সদস্যদের প্রতি মমতা তৈরি হয় না। তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে তারা আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।
এক্ষেত্রে প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, সন্তানদের সময় দিতে হবে এবং তাদের অন্যতম বন্ধু হতে হবে পিতা-মাতা বা অভিভাবকদের।