কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) রাসায়নিক তরল বর্জ্য চারপাশের জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কল-কারখানার এসব বিষাক্ত তরল বর্জ্য মিশছে বেশ কয়েকটি খাল-বিল ও নদীর পানিতে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলি জমিসহ জলাশয়ের জলজ প্রাণী।
বর্তমানে অনেক জলাশয়ে নেই জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব। এছাড়া ওইসব জলাশয়ের পানি ব্যবহার করে যেসব এলাকায় ফসল উৎপাদন হতো, সেসব ফসলি জমির আবাদ এখন অনেকটাই হুমকির মুখে। অনেক এলাকায় কমে গেছে ফসলের উৎপাদনও।
প্রায় ৫ বছর আগে কুমিল্লা ইপিজেডে ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে কেন্দ্রীয় তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন করা হয়। কিন্তু এতেও সমস্যাগুলোর কোনো প্রতিকার মেলেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। বর্তমানে কুমিল্লা ইপিজেডের তরল বর্জ্য চুইয়ে মিশছে পানিতে। তবে ইপিজেড কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের দূষিত কোনো বর্জ্য জলাশয়ে মিশছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালের মার্চ মাসে ২৬৭ দশমিক ৪৬ একর জায়গা নিয়ে কুমিল্লা ইপিজেড প্রকল্প অনুমোদিত হয়। বর্তমানে কুমিল্লা ইপিজেডে দেশি, বিদেশি এবং দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানাধীন মোট ৩৭টি কারখানা চালু রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর কুমিল্লা ইপিজেডে কোনো ধরনের তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন করা হয়নি। সর্বশেষ স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ইপিজেডের দক্ষিণ প্রান্তে বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন করার কাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। আর এটিতে রাসায়নিক ও জৈবিক উভয় পদ্ধতিতে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য পরিশোধন করা যায়।
বর্জ্য পরিশোধনাগার চালু হওয়ার পরেও ইপিজেডের তরল রাসায়নিক বিষাক্ত বর্জ্য কুমিল্লা জেলার দক্ষিণাংশের বিভিন্ন ফসলি জমি, নদী–নালা, পুকুর, খাল-বিল ও জলাশয়ে চুইয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ওই এলাকার প্রতিটি খাল-বিল ও নালার মধ্যে কালো রঙয়ের পচা পানি। আর পানি থেকে ভেসে আসছে দুর্গন্ধ। এসব স্থান দিয়ে হাঁটা-চলাও যেন কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিজয়পুর এলাকা থেকে এসব পানি লালমাই হয়ে ডাকাতিয়া নদীতে গিয়ে মিশছে। বিজয়পুর জেলখানা বাড়ি এলাকার রেলসেতুর নিচেও একই কালো পানি। কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়কের বিজয়পুর পাকা সেতুর নিচেও কালো পানি। বামিশা, দিঘিরপাড় কলেজের আশপাশেও কৃষি জমিতে কালো পানির দেখা মেলে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি ডা. মো. মোসলেহ উদ্দিন বলেন, কুমিল্লা ইপিজেডের তরল বর্জ্যের কারণে কয়েকশ ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে জলাশয় থেকে হারিয়ে গেছে নানা প্রজাতির মাছ। এসব বিষাক্ত পানি ফসল, মাছ ও মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এতে শরীরে জটিল রোগ দেখা দিতে পারে।
জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, কুমিল্লা ইপিজেডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে জেলার উন্নয়ন সভা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন স্থানে বহু বছর থেকে কথা বলছি। কিন্তু এখনো কোনো কাজ হয়নি।
কুমিল্লা নগরীর দক্ষিণ অংশের দিশাবন্দ এলাকার বাসিন্দা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের দিশাবন্দ, রাজাপাড়া, নেউরাসহ বেশ কিছু এলাকায় এখন বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে।
এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কুমিল্লা ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মো. জিল্লুর রহমান। তিনি দাবি করেন, তাদের বর্জ্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। এখান থেকে বর্জ্য কোনো জলাশয়ে যাচ্ছে না।
তিনি দাবি করে বলেন, কেন্দ্রীয় তরল বর্জ্য পরিশোধনাগারের মাধ্যমে তাদের সকল বর্জ্য পরিশোধিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত স্থানীয় জনগণ এসে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার পরিদর্শন করছেন।