বয়স ১০ থেকে ১৫, পরিচয় পথ শিশু-কিশোর। কারও জন্ম বস্তিতে আবার কারো জন্ম দরিদ্র পরিবারে। অনেকের মা নেই, আবার অনেকের বাবা নেই। কারও কারও মা থাকলেও কাজ করেন মানুষের বাসায়। আবার অনেকের বাবা আছে কিন্তু খবর নেন না সন্তানের। এই বয়সে তাদের বাবা-মায়ের আদর স্নেহে বেড়ে ওঠার কথা থাকলেও তারা বেড়ে উঠছে রাস্তায়। আর এতে করে এসকল শিশুরা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে।
নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া রেলস্টেশন, শহীদ মিনার, নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ বিভিন্নস্থানে এসব শিশু-কিশোরদের দেখা যায়। কেবল মাত্র শহরের আশপাশেই এসব শিশু-কিশোরদের সংখ্যা ২০০-২৫০’র বেশি। এরা দিনের বেলায় শহরের বিভিন্নস্থানে ভিক্ষাবৃত্তি করে। আর সন্ধ্যা নামলেই কিশোর গ্যাং এর সাথে জড়িয়ে নেমে পড়ে চুরি-ছিনতাইয়ে। পাশাপাশি এদের বেশিরভাগই মাদকাসক্ত।
এমনি ১১ বছর বয়সী এক শিশুকে মাদক সেবন করতে দেখা যায় চাষাঢ়া শহীদ মিনারের পাশে। কথা বলতে চাইলে সে বলে, আমার বাবা নেই। সারা দিন রাস্তায় ঘোরাঘুরি করি। আর রাতে স্টেশনে ঘুমাই। আমার বন্ধুদের অনেকেই আমার মতোই রাস্তায় বা স্টেশনে ঘুমায়। ৩০ টাকা দিয়ে জুতা লাগানোর গাম কিনছি। এইটা দিয়ে নেশা করলে দুপুরে আর খিদা লাগবো না।
এসব কিনতে টাকা কোথায় পায় এমন প্রশ্নের উত্তরে বলে, মানুষের কাছ থেকে চেয়ে টাকা নেই, না হলে চুরি করি। রাতের বেলায় বিভিন্ন মালামালবাহী ট্রাকের পেছনে উঠে চুরি করে নেমে যাই।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমাদের সমাজে পথশিশুদের জন্য শিশুশোধন কেন্দ্র ও আশ্রয় কেন্দ্র আছে। পাশাপাশি আমাদের আরো অনেক পুনর্বাসন কেন্দ্র আছে। তবে আমরা যে সময় এসব পথশিশুদের তালিকায় আওতাভুক্ত করতে যাই তখন এসব পথশিশুদের খুঁজে পাওয়া যায় না। এরা সবাই ভ্রাম্যমাণ। আমাদের পুলিশ কর্মকর্তাসহ সমাজসেবা, শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা সবাইকে বলা আছে এসব শিশুরা যদি কোনো অপকর্ম ও মাদকের সাথে জড়িত থাকে তাহলে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে ও তাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে রেখে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে।
একই বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘ক’ সার্কেল মেহেদী ইমরান বলেন, রাস্তায় যেসব কিশোররা অপকর্ম করে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। তবে তার আগে এদের পুনর্বাসন করা জরুরি। পাশাপাশি আমরা আগেও কিশোর গ্যাং সদস্যদের ধরেছি। এসকল বিষয়ে আমরা আরো কঠোর ব্যবস্থা নেব।