নরসিংদী সদর উপজেলার বৃহত্তর চরাঞ্চল আলোকবালিতে উৎপাদিত বিষমুক্ত উস্তা যাচ্ছে ঢাকার বাজারে। শুধুমাত্র নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালিতেই প্রায় সাড়ে ৫০০ বিঘা জমিতে অন্যান্য বছরের মতো চাষ করা হয়েছে বিষমুক্ত উস্তা। ফলে এসব উৎপাদিত উস্তা স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ার কারণে বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে জানান কৃষকরা।
আর বিষমুক্তভাবে উৎপাদন করতে খরচ কম ও বাজার মূল্য বেশি পাওয়ায় লাভবান কৃষকরা। তবে এবার ফলন ভালো হলেও সম্প্রতি শীতের তীব্রতা ও রোদের আলো না পাওয়ায় ফলনে ব্যাঘাত হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
সদর উপজেলার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: মোশারফ হোসেন জানান, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে ঢলের পানির সাথে পলি এসে জমা হওয়ায় চরাঞ্চলের উর্বর বেলে দো-আঁশ মাটি চরে রূপান্তরিত হয়। আর এই চরেই উস্তা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। ফলে উস্তার উৎপাদন সাধারণ এলাকার তুলনায় অনেক বেশি হয়।
নরসিংদীর চরাঞ্চলে উৎপাদিত বিষমুক্ত এসব উস্তা চাষে আগে অনভিজ্ঞতার কারণে প্রয়োগ করা হত কীটনাশক। এরফলে কৃষকের স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি উৎপাদনে বাড়তি খরচ হত। অপরদিকে বিষমুক্ত উস্তা হাতের নাগালে পাওয়াটা অনেকটাই কঠিন হয়ে পরত। সেই চিন্তা মাথায় নিয়ে নিরাপদ সবজি চাষের আওতায় বিষমুক্ত উস্তা চাষের উদ্যোগ নেন নরসিংদী কৃষি বিভাগ। চলতি বছর জেলার ৬টি উপজেলায় ১১৭ হেক্টর জমিতে বিষমুক্ত পদ্ধতিতে উস্তা চাষ করা হয়েছে বলে জানায় নরসিংদী কৃষি বিভাগ।
নরসিংদী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হাই জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চল আলোকবালিতে বিষমুক্ত পদ্ধতিতে প্রায় সাড়ে ৫০০ বিঘা জমিতে উস্তা চাষ করেছেন প্রায় ৩২৫ জন কৃষক। উস্তা খেতে ক্ষতিকর পোকা দমনে কীটনাশক ব্যবহার না করে ফেরোমিন ফাঁদ ও ইয়েলো ফাঁদসহ পোকা দমন করার সময়োপযোগী পদ্ধতি। এসব পদ্ধতির ফলে ক্ষতিকর পোকা খুব সহজেই দমন হওয়ায় কৃষককে বাড়তি খরচ করে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। ফলে উৎপাদিত হচ্ছে বিষমুক্ত উস্তা। একদিকে কীটনাশকের অপচয় রোধ ও অপরদিকে উৎপাদিত উস্তা স্বাস্থ্যসম্মতও। পাওয়া যাচ্ছে ন্যায্যমূল্যে।
চরাঞ্চল বাখরনগর গ্রামের উস্তাচাষী হোসেন মিয়া জানান, স্থানীয় বাজারসহ ঢাকার বাজারে বিষমুক্ত পদ্ধতিতে চাষ করা উস্তার চাহিদা বেশি হওয়ায় দামও বেশি পাওয়া যায়। এ পদ্ধতিতে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়না। এরফলে উৎপাদন খরচও অনেক কম হয়।
নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: জুলফিকার আলী জানান, বিষমুক্ত উস্তা চাষের আওতায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ পোকা দমনে কৃষকদের ইয়োলো ফাঁদ, ফেরোমিন ফাঁদসহ অন্যান্য পরামর্শ দেয়ার পর কৃষকরা আগের থেকে সচেতন হয়েছেন। প্রথমবার পরীক্ষামূলকভাবে সফল হওয়ায় এখন অন্যান্য সবজি চাষেও কীটনাশক ছাড়াই উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা।
নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কর্মকর্তা শোভন কুমার ধর জানান, বিগত বছর গুলোর তুলনায় এ বছর উস্তার দাম ও চাহিদা বেশি হওয়ায় এই এলাকার উস্তা চাষিরা খুবই খুশি ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ও রোধের আলো কম পাওয়ায় উৎপাদন কিছু কমে গেছে। এতে কৃষকরা সামান্য ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। তবে শীত কাটিয়ে রোদ শুরু হলেই এই সমস্যা কেটে যাবে।