হঠাৎ করে দেখলে বোঝার উপায় নেই এটি কি ধরনের সবজি। অনেকে হয়তো বিভ্রান্ত হবেন। বেগুনকে কেউ লাউ মনে করলেও ভুল হবে না। স্বাভাবিক বেগুনের থেকে কয়েক গুন বড় এসব বেগুন চাষ হচ্ছে পটুয়াখালীর লেবুখালীতে আঞ্চলিক উদ্যান তত্ত্বগবেষণা কেন্দ্রে। উচ্চ ফলনশীল জাতের এই বেগুন নিয়ে গত পাঁচ বছর যাবত এই কেন্দ্রে গবেষণা চলছে। উপকূলীয় এলাকার স্থানীয় এই জাতটি রাখাইন বেগুন নামে পরিচিত।
জানা যায়, রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই বেগুন চাষ করতেন। আর তার নাম অনুসারেই রাখাইন বেগুন নামে পরিচিতি পায় জাতটি। তবে কিভাবে এই জাতটি এসেছে কিংবা এর উৎপত্তি কিভাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানা যায়নি। কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, জাতটি সংরক্ষণ এবং শতভাগ বিশুদ্ধ করতে গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। এই জাতটি উপকূলীয় কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে বেগুন চাষে একটি বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র লেবুখালী,পটুয়াখালীর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রোজাউল করিম জানান, রাখাইন বেগুনের দুইটি ধরণ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে গাড় বেগুনি এবং অপরটি সবুজ রং। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে চারা তৈরি করে রোপণ করতে হয়। এটির চাষাবাদ প্রক্রিয়া সাধারণ বেগুনের মতোই। বেগুনের এই জাতটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি খেতেও সুস্বাদু। যেহেতু রাখাইন বেগুনটি স্থানীয় জাতের সেহেতু এই অঞ্চলের মাটির গঠন, তাপমাত্রা এবং লবণাক্ততার সঙ্গে এটি সহজেই খাপ খেতে পারছে।
বর্তমানে বেগুন গাছে সার প্রয়োগের মাত্রা কেমন হবে এবং রোগ বালাই ব্যবস্থাপনা কেমন হবে তা নিয়ে গবেষণা শেষ হয়েছে। চারা রোপণের ৬০ দিনের মধ্যেই গাছে ফল আসতে শুরু করে, গাছের জীবনকাল হয় প্রায় ৫ মাস। ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এই তিন মাস ফসল সংগ্রহ করা যায়। হাইব্রিড জাতের না হওয়ায় কৃষক চাইলেই ফল পাকিয়ে সরাসরি বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন। প্রতিটি বেগুন ৭শ থেকে ১৩শ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং একটি গাছে ৪ থেকে ৬ কেজি পর্যন্ত বেগুন হয়ে থাকে। বর্তমানে স্বাদের পাশপাশি বেগুনটির পুষ্টি গুণ নিয়ে গবেষণা চলছে বলেও জানান এই কৃষি বিজ্ঞানী।
তবে রাখাইনরা এই বেগুনের চাষ করলেও জাতটি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে কিছু কিছু বাঙালিরাও এই জাতের বেগুন চাষ করছে। তবে তার সংখ্যাও হাতে গোনা। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় এবং বরগুনা জেলার তালতলি উপজেলায় রাখাইন সম্প্রদায়ের কিছু কিছু মানুষ এই বেগুন চাষ করছে।