মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যুদণ্ড আপিলের রায়ে বহাল রাখায় খুশি হবিগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা। বিশেষ করে মাধবপুর ও নাসিরনগর অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। সৈয়দ মো. কায়সার মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই এলাকাতেই হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন, মুক্তিপণ আদায়, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন চালিয়েছিলেন।
আপিল বিভাগে রাজাকার সৈয়দ মো. কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখার মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা। পাশাপাশি তার মৃত্যুদণ্ড দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন কাজী কবির উদ্দিন বলেন, ‘রাজাকার কায়সারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখায় আমরা মুক্তিযোদ্ধারা ও বীরাঙ্গনা অনেক খুশি। আমাদের প্রাণের দাবি ছিল মাধবপুর ও নাসিরনগর এলাকার এই কুখ্যাত রাজাকারের ফাঁসি হোক। আপিল বিভাগে যেহেতু চূড়ান্ত রায় হয়েছে এখন শুধুমাত্র কার্যকরের পালা। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যেই এই কুখ্যাত রাজাকারের ফাঁসি কার্যকর করা ।’
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার ফুল মিয়া বলেন, ‘রাজাকার কায়সার এই এলাকায় যে তাণ্ডব চালিয়েছিল তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। হত্যা-গণহত্যা, মা-বোনদের ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের তাণ্ডব চালিয়েছিল সে। কিন্তু আমাদের দুঃখের বিষয় ছিল এই রাজাকার এখন বাংলার মাটিতে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আপিল বিভাগে তার (কায়সারের) ফাঁসি বহাল রাখায় আমরা মুক্তিযোদ্ধারা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা অনেক খুশি। আমরা মহামান্য ট্রাইব্যুনালকে ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি কায়সারের ফাঁসি দ্রুত কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি।’
মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা সুকোমল রায় বলেন, ‘আমাদের এলাকায় পাকিস্তানিরা যত হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ চালিয়েছিল, তার সবই কুখ্যাত রাজাকার কায়সারের নির্দেশেই হয়েছিল। দীর্ঘ সময় পরে হলেও এই রাজাকারের চূড়ান্ত ফাঁসির রায় হওয়ায় আমরা অনেক খুশি। এখন দ্রুত রায় কার্যকর হলে আমরা আর কিছুই চাই না।’
উল্লেখ্য- একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৩ সালের ২১ মে গ্রেফতার হয়েছিলেন সৈয়দ মো. কায়সার। তার বিরুদ্ধে একাত্তরে ১৫২ জনকে হত্যা-গণহত্যা, দুই নারীকে ধর্ষণ, পাঁচজনকে আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায় এবং দুই শতাধিক বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও ষড়যন্ত্রের ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এরমধ্যে ১৪টি অভিযোগেই প্রমাণিত হয়।
২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর সৈয়দ কায়সারকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ।
২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় সৈয়দ কায়সারের মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আপিল আবেদন করা হয়। সৈয়দ কায়সারের পক্ষে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন তুহিন আপিল আবেদনটি করেন। আপিলে খালাসের আরজিতে ৫৬টি যুক্তি তুলে ধরা হয়। ৩০ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের একই বেঞ্চে আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে আজ এই রায় প্রদান করেন।