লক্ষ্মীপুর সদরের চরশাহীতে নির্দেশনা অমান্য করে সরকারি খাল থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হয়েছে। উপজেলার চরশাহী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলজার মোহাম্মদের অনুমতিতে এ মাটি কাটা হয়। তবে প্রশাসন থেকে নির্দেশনা রয়েছে, বালু উত্তোলন কিংবা মাটি কাটতে চেয়ারম্যান অনুমতি দিতে পারবেন না। আর অন্য কেউ এই কাজ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া আছে।
এদিকে চেয়ারম্যানের অনুমতি পেয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক বাবুল আনসারী ভেকু (খনন যন্ত্র) মেশিন দিয়ে মাটি কেটে প্রায় ১০ দিনে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। চেয়ারম্যান গোলজার মোহাম্মদের অনুসারী হিসেবে এলাকায় সবার কাছে পরিচিত বাবুল।
জানা গেছে, গত কয়েকমাস আগে চরশাহী এলাকার ওয়াপদা খাল থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রির ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বাবুলের বিরুদ্ধে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করে স্থানীয়রা। কিন্তু চেয়ারম্যানের অনুমতি পেয়ে বাবুল এবার চরশাহীর বাইজ্জার দাঁড়া খাল থেকে মাটি কেটে নতুন বাণিজ্য শুরু করেছেন।
অন্যদিকে সরকারি খাল থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমি ও আশপাশের এলাকা। এ অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে চরশাহীর বাইজ্জার দাঁড়া খাল এলাকা থেকে মাটি পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ৫টি পিকআপ ভ্যান জব্দ করে পুলিশ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার চরশাহীর সোনালি ব্রিকস ফিল্ডের পশ্চিম পাশে ‘বাইজ্জার দাঁড়া’ নামক একটি সরকারি খাল থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বাবুল প্রায় ১৫ দিন ধরে মাটি কেটে বিক্রি করছেন। এতে ইউপি চেয়ারম্যান গোলজারের যোগসাজশ রয়েছে। প্রতিদিন একটি ভেকু মেশিন দিয়ে ৫টি পিকআপ ভ্যানের মাধ্যমে বিভিন্ন ইটভাটায় মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৫টি পিকআপ জব্দ করে। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা বাবুল আনসারী কৌশলে পালিয়ে যান।
অভিযোগ অস্বীকার করে বাবুল আনসারী বলেন, ‘খাল থেকে মাটি কেটে বিক্রি করার বিষয়টি সঠিক নয়। তবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাল সংস্কারের জন্য মাটি কাটিয়েছেন। মাটিগুলো আশপাশের সড়ক এবং গর্তে ফেলা হয়েছে।’
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলজার মোহাম্মদ বলেন, ‘খালটি ভরাট হয়ে পানি প্রবাহে বিঘ্ন ঘটছে। এতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পানি প্রবাহ চলমান রাখতে মাটি কাটতে বলেছি। এতে নেতাকর্মীদেরও কিছু টাকা উপার্জন হয়েছে।’
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মাটি পরিবহনের কারণে সড়কের ক্ষতি হচ্ছে বলে একটি অভিযোগ পাই। পরে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। আর কাগজপত্র না থাকায় গাড়িগুলো জব্দ করা হয়েছে।’
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল বলেন, ‘বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। তবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কোনো ভাবেই বালু উত্তোলন ও মাটি কাটার অনুমতি দিতে পারবেন না। কেউ যদি খাল থেকে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া আছে।’