কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের নওদা আজমপুর এলাকায় গড়ে উঠেছে জনসেবা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। প্রতিবন্ধীরা ওই বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে বদলে যাচ্ছে তাদের জীবনধারা। এখন তারা অনেকটা স্বাভাবিক মানুষের মতো আচরণ করে।
জনসেবা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের পরিচালক আতিয়ার রহমান ২০১৫ সালে মাত্র ২৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু করেন। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ২৩৯ জন। এর মধ্যে প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়। প্রতিদিন তাদের বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের নিজস্ব গাড়িতে করে আনা-নেয়া করা হয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন ২৩ জন।
প্রতিবন্ধী শিশুরা এখানে শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি ব্যায়াম ও খেলাধুলা করতে পারে। শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্তরিকতায় এই বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিশুরা এখন অনেক কাজে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। রয়েছে ফিজিওথেরাপিস্টসহ সংগীত ও বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক।
কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে বিদ্যালয়টিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শুরুতে বিদ্যালয়ে নিয়মিত রুটিন হিসেবে অ্যাসেম্বলি করানো হয়। এরপর আলাদা আলাদা ক্লাসরুমে তাদের বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করানো হয়। বিদ্যালয়ের ৭টি আলাদা আলাদা কক্ষে কেউ শিশুদের দাঁত ব্রাশ করিয়ে দিচ্ছেন, আবার ফিজিওথেরাপিস্ট অসুস্থ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রকমের ব্যায়াম করাচ্ছেন, ছবি সংবলিত অক্ষর দেখিয়ে পড়ানো হচ্ছে, ঢোল-তবলা-হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান শেখানো হচ্ছে।
অভিভাবক জেসমিন আরা খাতুন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমার প্রতিবন্ধী মেয়ে আগে কিছু বুঝত না। এখন মানুষের সঙ্গে মেশে। কথা বলার চেষ্টা করে, মা-বাবা বলে ডাকে।’
রাশিদা খাতুন নামে আরেক অভিভাবক বলেন, ‘আমার প্রতিবন্ধী ছেলেকে এই বিদ্যালয়ে ভর্তি করার পর অনেক উন্নতি হচ্ছে। সে এখন ইশারার মাধ্যমে আমাদের অনেক কিছু বোঝাতে পারে।’
জনসেবা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেরেবুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবন্ধীদের জীবনধারা পাল্টে উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। তারা এখন অনেক কাজে পারদর্শী হয়ে উঠছে। আগে যারা স্পষ্ট করে কথা বলতে পারত না তারা এখন তা পারে। বাংলা ও ইংরেজি বর্ণমালা চেনে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও তারা এখন অনেক সচেতন।
জনসেবা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের পরিচালক আতিয়ার রহমান বলেন, ‘প্রতিবন্ধী এসব শিশুদের বাড়ি থেকে আনা এবং বাড়ি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। আমাদের প্রতিষ্ঠানে ৩টি ইঞ্জিনচালিত করিমন গাড়ি আছে। আরও কয়েকটা থাকলে আমরা সকল শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে আনতে পারতাম। এই প্রতিবন্ধী শিশুদের আরও উন্নয়নে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করা প্রয়োজন।’
মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিংকন বিশ্বাস বলেন, ‘আমি বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছি। বেশ ভালো লেগেছে। বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করার ব্যাপারে সুপারিশ করব।’