অসংখ্য বাধা আর প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে নিজেদের এগিয়ে নিতে সর্বদা তৎপর নারীরা। তবে তাদের সামনে এগিয়ে চলার পথে সমাজের অসহযোগিতার প্রবণতাও কম নয়। কর্মস্থলের বৈরি পরিবেশ কিংবা বেতন ভাতার ক্ষেত্রে কম দেওয়া নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গৎবাঁধা কিছু পেশা থেকে বেরিয়ে এসে নিজের স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী কাজ পেতেও বেশ বেগ পোহাতে হয় নারীদের। তেমনি এক ব্যতিক্রমী পেশায় দেখা মিললো এক নারীর।
তিনি শহরের চাষাঢ়া রেল স্টেশনের গেটম্যান হিসেবে কর্মরত আছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কাজের সময়ে আশপাশের লোকজন তার দিকে তাকিয়ে থাকলেও তিনি তার নিজ গতিতে কাজ করেন। তবে গণমাধ্যমে নিজের পরিচয় জানাতে চাননি তিনি। স্টেশনের অন্যান্য কর্মকর্তারা তাকে নিয়ে গর্ববোধ করে বলে জানা গেছে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল পথে প্রতিদিন ১৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করে থাকে। চাষাঢ়া রেলগেট দিয়ে দিনে-রাতে মোট ৩২ বার গেট নামাতে হয়। দুই শিফটে কাজ করে দুই জন গেটম্যান। এর মধ্যে একজন গেটম্যান নারী সদস্য। তিনি অন্যদের কাছ থেকে অনেকটা দায়িত্বশীল বলে জানান স্টেশনের কর্মচারীরা।
কর্মরত এই নারীর সহকর্মীরা জানান, রেলের গেটম্যান হিসেবে নারায়ণগঞ্জে এর আগে কোনো নারী সদস্য কাজ করেননি। তিনি পুরুষ গেটম্যানের চেয়ে অনেক ভাল কাজ করেন। পুরুষদের অনেকেই চা সিগারেট পান করতে গিয়ে সিগন্যাল ফেলতে দেরি করতেন প্রায়ই। ফলে অনেক সময় ট্রেন থেমে যেতে বাধ্য হত লাইনের ওপর গাড়ি থাকার কারণে।
নারায়ণগঞ্জ নারী সংহতি আন্দোলনের নেত্রী পপি রানী সরকার বলেন, আগে স্টেশনে ঝাড়ু দেওয়া কিংবা স্টেশন মাস্টারের আয়া হিসেবে কাজ করতে দেখা যেত নারীদের। বর্তমানে স্টেশন মাস্টার থেকে শুরু করে ট্রেন চালক এবং লাইনম্যান, গেটম্যান সর্বত্রই দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে নারীরা। সাধারণত স্টেশন মাস্টার ও ট্রেন চালক নারীরা উচ্চশিক্ষিত হলেও গেটম্যান নারীরা শিক্ষিত নন। সেক্ষেত্রে তাদের মাঝে কুসংস্কার বা কটুকথা শোনার ভয় থাকে। এটি আশাব্যাঞ্জক যে নারীরা সকল ক্ষেত্রেই এই ভয় কাটিয়ে নিজেদের অবস্থান দখল করে নিচ্ছে।