দেড় বছর আগে যশোর শহরের লোন অফিসপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জ্যোতির সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ডা. তনিমা ইয়াসমিন পিয়াসার (২৮) পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। আগামী ২৪ জানুয়ারি তাদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনার আয়োজন চলছিল।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে নিজের পছন্দ মতো বাড়ি সাজানোর উদ্দেশে কেনাকানা করতে বের হয়েছিলেন পিয়াসা, তার স্বামী, বড় বোন, ভাবি, ভাইয়ের মেয়ে ও স্বামীর দুই বন্ধু।
কেনাকাটা শেষে বাড়ি ফেরার পথে নিজস্ব প্রাইভেটকারে চালকের আসনে ছিলেন পিয়াসার স্বামী জ্যোতি। ওই সময় তারা শহরের পাড়বাড়ি এলাকায় একটি বাড়িতে আলোকসজ্জা দেখতে যাচ্ছিলেন। রাত তখন ১টা। প্রাইভেটকারটি শহরের বিমান অফিস মোড়ে আসতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে ভাগ্যক্রমে স্বামী জ্যোতি বেঁচে গেলেও মারা যান পিয়াসা, তার বড় বোন তানজিলা ইয়াসমিন ইয়াসা (২৮) ও মামাতো ভাইয়ের বউ (ভাবি) আফরোজা তাবাসসুম তিথী (৩০)। এই তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যান।
আরও পড়ুন: যশোরে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন নিহত
এছাড়া এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছে নিহত তাবাসসুম তিথীর মেয়ে মানিজুর মাশিয়াব (৪) এবং জ্যোতির দুই বন্ধু শাহীন হোসেন (২৩) ও হৃদয় হোসেন (২৮)।
নিহত পিয়াসা ও ইয়াসা যশোর শহরের ঢাকা রোড বিসিএমসি কলেজ এলাকার মোহাম্মদ ইয়াসিন আলীর মেয়ে।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নিহত পিয়াসা ও ইয়াসার বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে চলছে শোকের মাতম। দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৩ জনকে হারিয়ে দিশেহারা স্বজনরা। ঘরের মধ্যে বাবা-মাসহ স্বজনরা আহাজারি করছে।
এদিকে সন্ধ্যায় নিহত ৩ জনের মরদেহ দাফন করা হয়।
জানা গেছে, নিহত পিয়াসা ও ইয়াসা দুই বোন। তাদের কোনো ভাই নেই। দুই সন্তানকে হারিয়ে নিঃস্ব মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী ও রেহেনা পারভীন হিরা দম্পতি।
মা রেহেনা পারভীন হিরা বলেন, ‘আমাকে মা বলে ডাকার আর কেউ থাকল না। আমি এখন কীভাবে বাঁচব?’
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, প্রাইভেটকার চালক জ্যোতি পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে গাড়ি চালানোর সময় মাদকাসক্ত অবস্থায় ছিলেন তিনি। সত্যি সত্যি জ্যোতি মাদকাসক্ত ছিলেন কিনা তা পরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিবারের সদস্যদের আবেদনের ভিত্তিতে মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই হস্তান্তর করা হয়েছে।