শিশিরভেজা ভোরে শালিক পাখির কিচিরমিচির ডাকে মুখর চারদিক। বৈদ্যুতিক তার, গাছ, টেলিফোন লাইনের খুঁটি, দোকান ঘরের ছাদের উপরে ছোটাছুটি করছে অসংখ্য শালিক। এমন পরিবেশের মধ্যেই খাবার হাতে দাঁড়ালেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। ঝাঁকে ঝাঁকে শালিকগুলো খাবারের কাছে উড়ে পড়ছে। আর পরম তৃপ্তিতে খাবারগুলো খেয়ে নিচ্ছে তারা।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা শহরে প্রতিদিন ভোরে এমন দৃশ্য দেখা যায়। এ যেন মুক্ত আকাশের পাখির সঙ্গে মানুষের অন্তরের মিতালি। নির্ভয়ে পাখিগুলো মানুষের কাছাকাছি খাবারের খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ছাড়াও পথচারীরা খাবার দিয়ে আনন্দ উপভোগ করেন।
গাংনী বাজারের পিয়াজু বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম ও রিপন হোসেনসহ কয়েকজন ৫-৬ বছর ধরে পাখিদের খাবার দিয়ে আসছেন। তাদের দেখাদেখি এখন খাবার বিতরণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে পাখির সংখ্যাও।
রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সারা দিন পিয়াজু বিক্রির পরে যা অবশিষ্ট থাকে তা এবং পিয়াজুর কুচি গুছিয়ে রেখে শালিকগুলোকে খেতে দেই। আর পরম তৃপ্তিতে ওই খাবার খেয়ে নেয় শালিকগুলো। গত ৫-৬ বছর ধরে আমরা এভাবে শালিকগুলোকে খাবার দেই। শালিকগুলো আমাদের অনেক আপন।’
রিপন হোসেন বলেন, ‘প্রথম দিকে দু’একটি শালিক পাখি খাবার খেতে আসত। এখন পাখির সংখ্যা কয়েক হাজার। দেখে মনে হবে যেন শালিকের রাজ্য। আমরা এদেরকে সন্তানের মতোই দেখি। চানাচুর, পিয়াজুর কুচিসহ বিভিন্ন প্রকার খাবার খায় এসব শালিক পাখি।’
পথচারী গাংনী ঈদগাহপাড়ার জিল্লুর রহমান সোমবার (২০ জানুয়ারি) ভোরে গাংনী বাসস্ট্যান্ডে চানাচুর ও মুড়ি ছিটাচ্ছিলেন। সেখানে হাজারো পাখি খাবারের জন্য উড়ে পড়ে।
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এভাবে পাখিগুলোকে খাবার খাওয়াতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে।’
এদিকে গাংনী বাসস্ট্যান্ড ছাড়াও গাংনী কাঁচাবাজারে প্রতিদিন সকালে হাজার হাজার শালিক পাখিকে খাবার দেয় বিভিন্ন দোকানের মালিক ও শ্রমিকরা।
ওই কাঁচাবাজারের শ্রমিক কালু মিয়া বলেন, ‘পাখিগুলোকে খাবার খাওয়াতে খুব ভালো লাগে। এ বাজারের পক্ষ থেকে প্রতিদিন আমরা খাবার দিচ্ছি।’
এছাড়া গাংনী উপজেলা শহরসহ আশপাশে বিপুল পরিমাণ শালিক পাখির দেখা মিলবে।
গাংনী বাজার কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান স্বপন জানান, বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা শালিক পাখিগুলোকে শুধু খাবারই দেয় না তাদের নিরাপত্তাও দেয়। এ কারণে পাখিগুলো নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারে।