‘বন কর্মকর্তার যোগসাজশে গাছ কাটার মহোৎসব’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল বনভিটের সরকারি বনাঞ্চল সরেজমিন পরিদর্শন করে তাৎক্ষণিক কাটা অবস্থায় প্রায় ৭১টি আকাশমণিসহ প্রায় ১৩০টি গাছ জব্দ করেছে স্থানীয় বনবিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে বনবিট পরিদর্শন করেন কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী, কুলাউড়ার রেঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হক, গাজীপুর রেঞ্জের বন কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন, বরমচাল ইউনিয়ন ভূমি তহশিলদার-সহ একটি টিম। এ ঘটনায় বনবিভাগ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী গাছ কাটার সত্যতা নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট বন বিট কর্মকর্তার গাফিলতিকে এজন্য দায়ী করেছেন।
তিনি বলেন, গাছগুলো সরকারি ভূমির। রিজার্ভ ফরেস্টের গা ঘেঁষা এই ভূমির গাছ কাটার দায় বন কর্মকর্তারা এড়াতে পারেন না। আমরা ওনাদের গাফিলতি পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরও দায়িত্বশীল হয়ে এসব গাছ রক্ষণাবেক্ষণ করার পরামর্শ দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রায় ১৩০টি কাটা গাছ জব্দ করা হয়েছে।’
এদিকে একইদিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গাজীপুর রেঞ্জের বন কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন জানান, ওই ভূমি মূলত ডিসি খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত। গাছগুলো সরকারের সম্পদ। কিছু দুষ্কৃতিকারী অবৈধভাবে গাছগুলো কেটে ফেলে। দ্রুত তাদের নাম প্রকাশ করা হবে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বরমচাল বনবিটের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আহমদ আলীর সহযোগিতায় টিলা থেকে কয়েক সপ্তাহ থেকে অবাধে গাছ কাটার মহাযজ্ঞ চলছে। এই গাছগুলো ক্রয় করছেন উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আহাদ ও বরমচাল ইউনিয়নের সিঙ্গুর গ্রামের আব্দুল হাসিম।
বিষয়টি স্থানীয় লোকজন বন কর্মকর্তা ও রেঞ্জ কর্মকর্তাকে অবহিত করলেও তারা এ বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করেননি। এছাড়াও বিষয়টি আমলে না নিয়ে গাছ কাটার বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে অস্বীকার করে আসছিলেন বরমচাল বিটের কর্মকর্তা আহমদ আলী।
এদিকে স্থানীয়রা আরো জানান, গত কয়েক বছর থেকে এই বনবিট থেকে নানা প্রজাতির গাছ কাটা হয়।
গত সোমবার (২০ জানুয়ারি) সরেজমিন দেখা যায়, বরমচাল বনবিটের পশ্চিম সিঙ্গুর এলাকায় প্রায় ১৫-২০ একর জায়গা জুড়ে কয়েকটি টিলায় অবাধে কাটা হচ্ছে ৮-১০ বছর বয়সী আকাশী, বেলজিয়ামসহ নানা প্রজাতির দামি গাছ। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে আসামিরা পালিয়ে যান।
এসময় দেখা যায়, টিলায় প্রায় শতাধিক গাছ কেটে তা স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এবং আরো শতাধিক গাছ কাটা অবস্থায় টিলায় পড়ে আছে।
ভিডিও ও ছবি তোলার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে দেখা হয় সফর আলী নামের এক প্রহরীর। তিনি তাদের জানান, সপ্তাহ খানেক সময় থেকে তিনি বনের গাছগুলো পাহারা দিচ্ছেন।
কেন পাহারা দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা গাছ ক্রয় করে নিচ্ছেন তারা তাকে দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি দিয়ে রেখেছেন।’