লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তালুক পলাশী দারুল হুদা স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা। এতে দুই গ্রুপ শিক্ষকের দ্বন্দ্বে বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। এছাড়া এর প্রধান শিক্ষক হামিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি বই বাজারে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাদরাসার সাইনবোর্ড ভাঙা। মাদ্রাসা ভবনের ফাঁকা একটি কক্ষে তিন যুবক ধূমপান করছেন। বাকি কক্ষ তালাবদ্ধ। তিন যুবকের মধ্যে হামিদুল ইসলাম নিজেকে ওই মাদরাসার প্রধান শিক্ষক, মাইদুল ইসলাম সহকারী শিক্ষক, সুরুজ্জামান মৌলভি শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দেন।
প্রধান শিক্ষক হামিদুল ইসলামের কাছে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা কতজন জানতে চাইলে চুপ করে থাকেন। শিক্ষার্থী কতজন এবং তারা কোথায় জানতে চাইলেও চুপ থাকেন তিনি।
কিছুক্ষণ পর জানা গেল, পাশের স্কুল থেকে কিছু শিক্ষার্থীকে ইজিবাইকে নিয়ে এসে মিষ্টি মুখ করিয়ে তাদের হাতে বই তুলে দেওয়া হয়েছে। আর বেশিরভাগ বই কেজি দরে বিক্রি করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক হামিদুল ইসলাম।
এদিকে সহকারী শিক্ষক ও মৌলভি শিক্ষক পরিচয় দানকারী ওপর দুই ব্যক্তি বলেন, মাদরাসার শিক্ষকদের নূন্যতম কোন সুযোগ সুবিধা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান বন্ধ আছে।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৮৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত লেখাপড়া হত। কিন্তু সহকারী শিক্ষক থেকে রাতারাতি স্বঘোষিতভাবে হামিদুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর থেকে শিক্ষকদের মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এতেই মাদরাসাটিতে প্রায় চার বছর ধরে পাঠদান বন্ধ।
মাদরাসার জমি দাতা সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, পূর্বের শিক্ষকরা অব্যাহতিপত্র দেয়ার পরে পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সিদ্ধান্তক্রমে মাদরাসার সভাপতি শামছুল ইসলাম ফয়জুর রহমানকে প্রধান শিক্ষক ও হামিদুল ইসলামকে জুনিয়র মৌলভি, আমার পুত্রবধূ ফরিদা খাতুনকে জুনিয়র সহকারী শিক্ষক ও আব্দুল লতিফকে এবতেদায়ী ক্বারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। কিছুদিন পর সহকারী শিক্ষক হামিদুল ইসলাম নিজেকে প্রধান শিক্ষক দাবি করে প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র জালিয়াতি করে বিভিন্ন দফতরে কাগজপত্র দাখিল করে। ওই তালিকায় সহকারী শিক্ষক ফরিদা খাতুন ও আব্দুল লতিফকে বাদ দেওয়া হয়। এতে উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
বাদপড়া অপর শিক্ষিকা ফরিদা খাতুন জানান, বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও তা কোন সুরাহা পাইনি। আমাদের সকলের স্বপদে বহালের পরিবেশ নিশ্চিত ও স্বঘোষিত প্রধান শিক্ষক জালিয়াতির হোতা হামিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
এ ব্যাপারে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফয়জুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
আদিতমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এএসএম আরিফ মাহফুজ বার্তা২৪.কম-কে জানান, লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত চলছে। কেউ যদি সরকারি বই কালো বাজারে বিক্রি করে, তাহলে সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।