প্রায় ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারেনি কক্সবাজারসহ সারাদেশের জেলেরা। তাই কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ছিল ফাঁকা। জেলেরা ছিল বেকার। বাজারগুলোতে আকাল ছিল মাছের। কিন্তু এখন দৃশ্য পাল্টে গেছে। রূপালি ইলিশের রমরমা কারবার চলছে এখন। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ে নতুন রেকর্ড করেছে কক্সবাজার 'মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র'।
মাছ ব্যবসায়ীরা জানায়, ৬৫ দিন খুব কষ্টে দিন পার করলেও এখন তার সুফল পাচ্ছে সবাই। ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ। যার ছোঁয়া পড়েছে প্রতিটি বাজারে। দামও ক্রেতাদের অনুকূলে। বড় সাইজের প্রতি কেজি ইলিশের দাম পড়ছে ৫শ টাকা থেকে ৬শ টাকার মধ্যে। তাই সহজেই ক্রয় করতে পারছে ক্রেতারা। স্থানীয় বাজার ছাড়াও সারাদেশে যাচ্ছে কক্সবাজারের ইলিশ।
শহরের নুনিয়াছড়া ফিশারীঘাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দেখা যায়, ট্রলার মালিক, জেলে পল্লী, ভোক্তা সাধারণের মুখে হাসি ফুটেছে। সম্প্রতি সাগরে মৎস্য শিকার বন্ধ থাকার পর বর্তমানে কক্সবাজারের হাটবাজারে ইলিশে ভরে গেছে। কিছুদিন আগে বাজারে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের আকাল চললেও এখন ইলিশ পেয়ে দারুণ খুশি স্থানীয়রা।
কক্সবাজার 'মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র' সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের জুলাই থেকে চলতি মাসের ২১ জানুয়ারি (৬ মাস) এ বরফ সেক্টর থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪১ লাখ ৫৪ হাজার ৬২৬ টাকা। কিন্তু ২০১৮-২০১৯ পুরো অর্থ বছর জুড়ে রাজস্ব আদায় হয় ৪৭ লাখ ১৮ হাজার ৭২৪ টাকা।
২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের জুলাই থেকে চলতি মাসের ২১ জানুয়ারি (৬ মাস) মাছ সেক্টর থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪৫ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। আর পুরো ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায় হয় ৫৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এছাড়াও বিভিন্নভাবে রাজস্ব আদায় ৯ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৪ টাকা। মাত্র ৬ মাসের মাথায় যা গত অর্থবছরের খুবই কাছাকাছি চলে এসেছে। এটিকে নতুন সফলতা হিসেবে দেখছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা।
ফিশিং ট্রলারের মালিক সেলিম বহদ্দার বলেন, গত ৭-৮ দিন ধরে বঙ্গোপসাগর থেকে যেসব ট্রলার ঘাটে ভিড়ছে। দেখা গেছে, অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের তুলনায় প্রায় বোটে ইলিশই বেশি। কারো ট্রলারে ২০ হাজার, কারো ২৫ হাজার এমনকি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার ইলিশও ধরা পড়েছে।
মাছ ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বার্তা২৪.কমকে বলেন, যেভাবে ইলিশ ধরা পড়ছে, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে বিদেশেও ইলিশ রফতানি করা যাবে। আগের চেয়ে কম মূল্যে ইলিশ ক্রয় করে খুশি মনে ঘরে ফিরছেন ক্রেতারা। বর্তমানে কক্সবাজারের চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে ইলিশ মাছ। স্তূপে স্তূপে ইলিশ সাজিয়ে রেখেছে ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় বাজারসহ হাটবাজারে ইলিশের মূল্য হাতের নাগালে এসেছে। একটু ছোট্ট সাইজের হলে কেজি মাত্র ২৮০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা ও বড় হলে ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।
শহরে ইলিশ মাছের দাম সস্তা শুনে বাজারে আসা কপিল মাহামুদ জানান, এক সময় ফিশারি ঘাট থেকে কেজি প্রতি দুই হাজার টাকায় ইলিশ কিনেছি। কিন্তু এখন বড় সাইজের ইলিশ কিনেছি ৫৫০ টাকায়। বাসার জন্য অনেক ইলিশ কিনেছেন তিনি।
কক্সবাজারে ইলিশ মাছের দাম সস্তা শুনে চট্টগ্রাম থেকে আসা এক পাইকারি ব্যবসায়ী আবু ছৈয়দ বার্তা ২৪.কমকে বলেন, ইলিশের শেষ মৌসুমে কারণে সকালে এখানে চলে এসেছি মাছ কিনতে। তবে এত মাছ ধরা পড়বে তা কল্পনাও করিনি। তিনি বলেন, প্রায় ৫ মণ ইলিশ মাছ ক্রয় করেছি। তাও আবার বিভিন্ন দামে কেনা হয়েছে। তবে বড় আকারের ইলিশের সংখ্যা ছিল কম। তবে মাঝারি ও ছোট্ট আকারের মাছ বেশি।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক জাহিদুল ইসলাম লিকন বার্তা২৪.কমকে বলেন, গত ২১ দিনে কক্সবাজারের জেলেদের জালে আনুমানিক ৬শ মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আহরণে ব্যস্ত জেলেরা। ৬৫ দিন বন্ধের সুফল পাচ্ছে জেলে ও ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি সরকারও পাচ্ছে রাজস্ব।