কুমিল্লার চান্দিনায় নৈশপ্রহরী মো. নাছির উদ্দিনকে (২৬) খুনের ১০ দিন পর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। কিশোরী ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় পরিকল্পিতভাবে ওই নৈশপ্রহরীকে খুন করা হয় বলে জানান পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মলনে ওই হত্যার ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মো. নূরুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, বীভৎস এই হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে খুনের ঘটনাটি ছিলো একেবারেই ক্লু-লেস। আমাদের কাছে সামান্য একটু রক্তের দাগ ছাড়া আর কোনো ক্লু ছিলো না। তারা হলেন- উপজেলার নাওতলা গ্রামের মৃত সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে সানাউল্লাহ (২০) এবং বাখরাবাদ গ্রামের মাদুল মিয়ার ছেলে মোফাজ্জেল ওরফে মোয়াজ্জেম (২৪)।
হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণে তিনি জানান, দুই আসামি সানাউল্লাহ ও মোয়াজ্জেম একই এলাকার বাসিন্দা। তারা দুজনেই ছিল অটোরিকশা চালক। ঘটনার দিন অর্থাৎ ১২ জানুয়ারি রাত সাড়ে দশটার সময় সানাউল্লাহ নিহত নাছিরের দোকানে চা খাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। নিহত নাছিরের বাবা অসুস্থ থাকায় সেদিন সে নৈশপ্রহরীর দায়িত্বে ছিল।
দোকানে যাওয়ার পরে একই গ্রামের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে জরিমানা দেওয়ার ঘটনায় নাছির সানাউল্লাহকে ভর্ৎসনা করে। নাসির এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাদের দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরবর্তীতে সানাউল্লাহ ও মোয়াজ্জেম দু'জনে মিলে নাছিরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সানাউল্লাহ বলে যখন সে নাসিরের ওপর আক্রমণ করবে, তখন মোয়াজ্জেম দোকানের বিদ্যুতের লাইন খুলে দেবে।
পুলিশ সুপার সৈয়দ মো. নূরুল ইসলাম আরো জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী ওইদিন রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে আসামি সানাউল্লাহ নাসিরের দোকানে যায়। এ সময় মোয়াজ্জেম তার দোকানের বৈদ্যুতিক লাইনের তার খুলে দেয়। পরে সানাউল্লাহ নাসিরের দোকানে থাকা একটি বটি দিয়ে তার মাথায় কোপ দেয়। এ সময় নাছির চিৎকার করে ওঠে এবং জীবন বাঁচানোর জন্য দোকান থেকে দৌড় দেয়। এতে সে মহাসড়কের ওপরে চলে গেলে অজ্ঞাত একটি ট্রাক/বাস তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এরপর আসামিরা ওই রক্তাক্ত বটি নাছিরের দোকানের চা ধোয়ার পানিতে ধুয়ে পরিস্কার করে এবং তারা বাড়িতে চলে যায়। পরবর্তীতে ধারণা করা হচ্ছে সারারাত মহাসড়কের ওপর দিয়ে চলাচল করা গাড়ির চাকায় একের পর এক পিষ্ট হয়ে নাছিরের মরদেহটি ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আসামিরা পুরো ঘটনাটি স্বীকার করেছে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কুমিল্লা উত্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাখাওয়াত হোসেন, ডিএসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিম উল আহসান প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনার নাওতলা এলাকার আলিম মাদ্রাসা সংলগ্ন একটি মার্কেটের নৈশপ্রহরীর কাজ করত নাওতলা গ্রামের রবি উল্লাহ। আর ওই মার্কেটে চা দোকানে ব্যবসা করতেন রবি উল্লাহর ছেলে নাছির উদ্দিন। ১২ জানুয়ারি রাতে রবি উল্লাহ শারীরিক অসুস্থতার কারণে নৈশপ্রহরীর দায়িত্ব পালন করেন তার ছেলে নাছির উদ্দিন। পরদিন সকালে তার মহাসড়কের ওপর থেকে নাছিরের ছিন্নভিন্ন মরদেহের অংশ বিশেষ উদ্ধার করে পুলিশ।