সুনামগঞ্জ শহর এলাকায় সুরমা নদীর তীর এখন ময়লার ভাগাড়। কয়েকটি এলাকার ময়লা-আবর্জনা নদী ও নদীর তীরে ফেলা হচ্ছে। গৃহস্থালির ময়লা-আবর্জনা স্তূপ হয়ে আছে নদীর পাড়ে। স্তূপে প্লাস্টিকের খালি বোতল থেকে শুরু করে পলিথিন, কলার কাঁদিসহ পরিত্যক্ত নানা সামগ্রী পড়ে আছে।
এতে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। আবর্জনা থেকে ছড়ানো দুর্গন্ধে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন আশপাশের বাসিন্দারা।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সাহেববাড়ি সেলুঘাট, উত্তর আরপিননগর, পশ্চিমবাজার, মধ্যবাজার, চাঁদনীঘাট, সুরমা হকার্স মার্কেট, জগন্নাথবাড়ি, প্রধান মাছ বাজার এলাকা, জেলরোড ফেরিঘাট এলাকা, লঞ্চঘাট এলাকা, উকিলপাড়া এলাকা, ষোলঘর এলাকায় নদীতীরে স্থানীয় লোকজন নিয়মিত হোটেল-রেস্তোরাঁর পচা ও উচ্ছিষ্ট খাবারসহ নানা রকমের বর্জ্য ফেলছেন। তীরে ফেলার কারণে এসব বর্জ্য গড়িয়ে পানিতে পড়ছে। কয়েক বছর ধরে প্রকাশ্যে এসব বর্জ্য ফেললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দূষণ রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
আরপিননগর এলাকার শামীম আহমদ ও সাজু আহমদ বলেন, ‘নদীর পানি প্রতিনিয়ত ব্যবহার করতে হয় আমাদের। নদীর তীরে যদি ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়, তখন পানি দূষিত হয়। পানি কেউ ব্যবহার করতে পারেন না। পঁচা দুর্গন্ধ বের হয়। এতে রোগ জীবাণুও সৃষ্টি হয়। তাই নদীর তীরের ময়লা-আবর্জনা অপসারণ জরুরি প্রয়োজন।’
লঞ্চঘাট এলাকার ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন পলাশ বলেন, ‘যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে মশা-মাছির জন্ম হয়। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশ নষ্ট হয় এবং রোগেরও সৃষ্টি হয়। তাই ময়লা পানি বা আবর্জনা ফেলার আগে পরিবেশ নিয়ে ভাবতে হবে সকলকে। সুন্দর পরিবেশ সুরক্ষা সকলের দায়িত্ব।’
ব্যবসায়ী সাজাউর রহমান বলেন, ‘ইব্রাহীমপুর গ্রামের আনন্দ বাজার গিয়ে শহরের দিকে তাকালে দেখা যায় নদীর তীরে ময়লার একাধিক স্তূপ। এই ময়লা আবার কেউ কেউ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন। ময়লা ফেললে যেমন দুর্গন্ধ ছড়ায়, পুড়ে ফেলার সময়ও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়।’
সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন সংগঠনের সভাপতি একেএম আবু নাসের বলেন, ‘শহরের আনাচে-কানাচে কিছু কিছু জায়গায় যেমন ময়লা-আবর্জনা দেখা যায়, তেমনি নদীর তীরেও বেশ কিছু জায়গায় ময়লার স্তূপ দেখা যায়। যারা ময়লা ফেলেন, তাদের সচেতন হওয়া উচিত। কারণ এই নদীর পানিতে অনেকে গোসল করেন, সাংসারিক কাজকর্মেও ব্যবহার করেন। মানুষ নদীপথে চলাচলের সময় এই নোংরা পরিবেশ তাদেরও নজরে আসে। এই জন্য নদীর তীর রক্ষায় এবং পরিবেশ সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।’
পৌর কাউন্সিলর চঞ্চল কুমার লোহ বলেন, ‘নদীর তীরের পরিবেশ সুরক্ষায় মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে। আমাদের পৌরসভার গাড়ি দিয়ে বাসা-বাড়ি থেকে ময়লা-আবর্জনা নিয়ে আসে। বিভিন্ন স্থানে ডাস্টবিন স্থাপন করা আছে। শহর পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য অতিরিক্ত ক্লিনার আছে। এরপরও এক শ্রেণির মানুষ নদীর তীরে ময়লা-আবর্জনা ফেলে দেয়। এতে পরিবেশ নষ্ট হয়। আমরা বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থাপনাকে আরো জোরদার করব।’