গাইবান্ধার রসুলপুর ইউনিয়নের মধ্য রসুলপুর গ্রামের পালপাড়া এলাকার প্রায় ১০টি পরিবার পূর্ব পুরুষের পেশাকে আজও আঁকড়ে ধরে আছেন। তাদের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে এখানো তৈরি করে আসছেন কাদামাটির পণ্যসামগ্রী। মাটি দিয়ে হাঁড়ি-পাতিল, কলসি, থালা-বাটি, সরা-বাসন প্রভৃতি তৈরিকৃত জিনিসপত্র বিক্রি করেই সংসার চলে তাদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিভৃত পল্লী অঞ্চলের মধ্য রসুলপুর পালপাড়ায় সোহাগী রানী, ধর্মপাল চন্দ্র, গীতারানী ও মনোরঞ্জন পাল চন্দ্রসহ আরও অনেকে মাটির সামগ্রী তৈরি এবং তা শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এ সময় কথা হয় তাদের সঙ্গে। তারা জানায়, অতীতে গ্রাম-গঞ্জে মাটির তৈরি পণ্যসামগ্রীর কদর ছিল অনেক বেশি। এসব পণ্য শোভা পেত প্রত্যেক বাড়িতে। এছাড়া গৃহস্থালির নিত্যব্যবহার দ্রব্যাদি, পুতুল, খেলনা, প্রতিমা, প্রতিকৃতি, ফুলের টপসহ অসংখ্য জিনিস আজও তৈরি করে ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। তবে ইদানীং প্রযুক্তির ব্যবহার ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন তা হারিয়ে যেতে বসেছে।
বর্তমানে এ ব্যবসায় মন্দাভাব থাকায় এই মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িতদের চলছে দুর্দিন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতেও দৃঢ় মনোবল নিয়ে মাটির পণ্য তৈরি ও তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন রসুলপুরের কুমারপাড়ার ১০টি পরিবার।
এই শিল্পের অন্যতম কারিগর ধর্মপাল চন্দ্র বলেন, এসব জিনিসপত্র তৈরির প্রধান উপকরণ মাটি। এঁটেল ও দোআঁশ মাটি সংগ্রহ করার পর তা কাদা করে একটি গোলাকৃতির চাকের মধ্যে পণ্য বানানো হয়। এরপর রোদে শুকাতে হয় সেইসব পণ্যগুলো। শুকানো হলেই ভাটায় (বড় চুলা) খড়কুটো জ্বালিয়ে তা পোড়ানো হয়ে থাকে।
আরেক কারিগর সোহাগী রাণী বার্তা২৪.কমকে জানান, তৈরি করা মাটির দ্রব্যসামগ্রীগুলো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে পাইকারিতে বিক্রি করা হয়। যা বিক্রি করে প্রতি মাসে খরচ বাদে লাভ হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এ থেকে সংসারের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, মধ্য রসুলপুর গ্রামে প্রায় ৫০টি পরিবার মৃৎশিল্পের কাজ করতেন। এটির চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছে।
এখন এটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা একান্ত জরুরি। কেননা, সরকার যদি মৃৎশিল্প গোষ্ঠীকে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে সহায়তা দিতে পারে, তাহলে মাটির শিল্পের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, মাটির পণ্য তৈরি করা একটি ভালো কাজ এবং লাভজনক। তাদের বিষয়ে কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।